এলএনজি আমদানি: আগের সরকারের সিদ্ধান্তই নেওয়া হলো নতুন করে
তালিকাভুক্ত ২৩ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে ২০ কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। চলতি সেপ্টেম্বরে ৬, অক্টোবরে ৫, নভেম্বরে ৫ ও ডিসেম্বরে ৪ কার্গো এলএনজি আমদানি করবে পেট্রোবাংলা। এক কার্গোতে থাকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজি।
আজ বুধবার ঢাকায় সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাসের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এলএনজি আমদানির প্রস্তাব সদ্য পদত্যাগী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়। আগের সরকারের সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রায় প্রতি সপ্তাহে এলএনজি আমদানির ক্রয় প্রস্তাবও অনুমোদিত হতো। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে আজ এ প্রস্তাব নতুন করে উপস্থাপন করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
নীতিগত অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন কি না এবং দু–একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, তার কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বৈঠকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছি। এখন এগুলো বাতিল করতে গেলে এলএনজি আমদানি করা যাবে না। এটাও দেখেছি যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো।’
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এলএনজি আমদানির ব্যাপারে ২৩ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পেট্রোবাংলার মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টও (এমএসপিএ) সই করা আছে।
স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য আগ্রহী বিক্রেতা বা সরবরাহকারীদের তালিকা চেয়ে সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে। এতে ২৯ প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও ১৭টির সঙ্গে প্রথম দফায় এমএসপিএ অনুস্বাক্ষর হয়। আইনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার (ভেটিং) পর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পেট্রোবাংলার সঙ্গে এমএসপিএ স্বাক্ষরের অনুমোদন দেয় ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে। পরে অবশ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৩–এ উন্নীত হয়, যা এখনো আছে।
আগের সরকারের আমলে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য নীতিগত অনুমোদন নেওয়া বিষয়টি নতুন করে কেন অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে তোলা হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স) নিয়ে এটা নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক এম এস গানভোর ও ভিটল এশিয়া, জাপানের জেরা, যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি, সুইজারল্যান্ডের টোটাল এনার্জি গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশি এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। ঘুষ দিয়ে কাজ পাওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ভিটল এশিয়া কালোতালিকাভুক্ত বলে জানা গেছে। ভিটল এশিয়ার বাংলাদেশি এজেন্ট সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের এক আত্মীয় বলে জ্বালানি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে থাকেন।
অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি করার প্রস্তাবও নীতিগত অনুমোদন পায়।
অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের পাশাপাশি আজ সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয় সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে। এতে উপস্থাপিত দুটি প্রস্তাবই অনুমোদিত হয়। একটি হলো পণ্য বিক্রয়কারী সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব। এতে খরচ হবে মোট ৯৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতি কেজি ডাল কেনায় খরচ পড়বে ৯৮ টাকা ২০ পয়সা। উন্মুক্ত দরপদ্ধতিতে অংশ নিয়ে ডাল সরবরাহের কাজ পেয়েছে সাহারা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
ক্রয় কমিটিতে অনুমোদিত অন্য প্রস্তাব হলো সার আমদানিবিষয়ক। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে ১২১ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়। প্রতি টনের দাম পড়বে ৩৪৩ দশমিক ১৭ ডলার।