ডলারের দাম আরও বাজারমুখী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এখন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদিত ব্যাংক শাখাগুলো (এডি ব্রাঞ্চ) তাদের গ্রাহক ও ডিলারদের কাছে নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার দাম নির্ধারণ করতে পারবে। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৫ জানুয়ারি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদিত শাখাগুলো থেকে প্রতিদিন দুইবার বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সরবরাহ করবে। এক লাখ ডলারের বেশি কেনাবেচার তথ্য বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। এ ছাড়া বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার তথ্য বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ছকে এসব তথ্য জানাতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ১২ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার কেনাবেচার তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদিনের একটি ভিত্তিমূল্য বা রেফারেন্স প্রাইস প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই ভিত্তিমূল্য প্রকাশ করা হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপবিষয়ক একটি নীতিমালাও প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে। ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার দাম বাজারভিত্তিক রাখতে এই নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে বাজারভিত্তিক দামের সুবিধা নিয়ে কেউ বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে না পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের মধ্যে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শীর্ষ ২৫ ব্যাংকের সঙ্গে সভা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব পরিকল্পনার কথা জানানো হয়, যা প্রজ্ঞাপন আকারে আজ জারি করা হয়েছে। সভায় বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কিছু ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান যোগ দেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় গভর্নর জানিয়ে দেন, যাঁরা ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করছেন, তাঁদের শাস্তি হওয়া উচিত। প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের ডলার একই দামে কিনতে হবে। ১১৯ টাকার সঙ্গে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ যুক্ত হতে পারে। কেনা দামের চেয়ে ১ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করা যাবে।
এদিকে গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এক লিখিত বার্তায় জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে প্রবাসী আয় আহরণের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বিনিময়ের হার সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা নির্ধারণ করেছে। ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে এই বিনিময় হার তদারকির ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
ডলারের বাজারে প্রায় আড়াই বছর ধরে অস্থিরতা চলছে। মার্কিন এই মুদ্রার দাম এই সময়ে ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ডলার বাজার নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সংকট না কেটে উল্টো বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে বাজার স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেওয়ার পর রিজার্ভ কমে অর্ধেক হয়ে যায়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি ডলারের দাম ১২০ টাকায় নির্ধারণ করে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন। এতে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে ডলারের বাজার। বাড়ে প্রবাসী আয়ও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫ সালের মধ্যে ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। তারই অংশ হিসেবে ডলারের দাম এখনকার তুলনায় আরও কিছুটা বাজারমুখী করতে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ডলার লেনদেনের তথ্য সংগ্রহে একটি নতুন ছক নির্ধারণ করে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঘোষিত দামে লেনদেন হচ্ছে কি না, তা প্রতিনিয়ত তদারক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া আমদানি দায় মেটাতে ডলারের সংকট দেখা দিলে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে তা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করবে।