গত ৫০ বছরে এশিয়ার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে এই অঞ্চল। কিন্তু এশিয়ার কিছু দেশে আগেভাগে বিশিল্পায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। দেশের উৎপাদন খাত বড় হচ্ছে, জিডিপিতে তার অবদান বাড়ছে।
এশিয়ার কিছু দেশে যে বিশিল্পায়ন হচ্ছে, বাংলাদেশ তার সুযোগ নিতে পারে। অর্থাৎ এসব দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। সে জন্য প্রয়োজন যথাযথ নীতি প্রণয়ন। আজ সোমবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ‘এশিয়াস জার্নি টু প্রসপারিটি: পলিসি, মার্কেট অ্যান্ড টেকনোলজি বা সমৃদ্ধির পথে এশিয়ার যাত্রা: নীতি, বাজার ও প্রযুক্তি’ শীর্ষক মূল উপস্থাপনা পেশ করেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুকি সাওয়াদা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।
বিনায়ক সেন বলেন, গত ৫০ বছরে এশিয়ার উন্নতি হয়েছে মূলত বাজার অর্থনীতির হাত ধরে। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল সীমিত। রাষ্ট্র অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে; শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করেছে—তার ভূমিকা অনেকটা এর মধ্যেই সীমিত। কিন্তু নতুন বাস্তবতায় রাষ্ট্রের আরও জোরদার ভূমিকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বিনায়ক সেন বলেন, আরও কিছু খাতে সরকারের বড় ভূমিকা প্রয়োজন, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, সর্বজনীন পেনশন ও স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, বৃহত্তর সামাজিক সুরক্ষা, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব ও সামাজিক খাতসংশ্লিষ্ট বিষয়ে। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মত দেন তিনি।
আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন বিনায়ক সেন। সেটা হলো আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতি। গত এক বছরে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে যেভাবে ভুগতে হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার সময় এসেছে।
ইয়াসুকি সাওয়াদা তাঁর উপস্থাপনায় এশিয়ার উন্নয়নের আখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এশিয়া এখন বৈশ্বিক জিডিপির চালিকা শক্তি। কিন্তু এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। যেমন উন্নয়নশীল এশিয়ার মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ২০১৮ সালেও ওইসিডিভুক্ত, অর্থাৎ ধনী দেশগুলোর তুলনায় মাত্র ১২ শতাংশ ছিল।
এই বাস্তবতায় ইয়াসুকি সাওয়াদার মত, এই অঞ্চলে স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় চৌকস ব্যবস্থা নিতে হবে, এখন সময় এসেছে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রণয়নের। এ ছাড়া উদ্ভাবনে প্রণোদনা দেওয়া ছাড়াও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগস্বল্পতা দূর করায় জোর দেন তিনি।
এ পর্যায়ে একজন প্রশ্ন করেন, ইয়াসুকি সাওয়াদা যে এশিয়ার উন্নয়নের আখ্যান দিলেন, সেখানে বাংলাদেশের স্থান কোথায়।
জবাবে ইয়াসুকি সাওয়াদা বলেন, বাংলাদেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক খাতে অনেক উন্নতি করেছে। শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার অনেক কমেছে। এখন সময় হয়েছে, বাংলাদেশকে শ্রম ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আরও জোর দিতে হবে। মানসম্মত উন্নয়নের দিকে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন এশিয়ার উন্নয়নের অংশ।