২০ দিনে রিজার্ভ কমেছে ১৬২ কোটি ডলার
চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ২০ দিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ১৬২ কোটি মার্কিন ডলার কমেছে। এর কারণে এখন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে রিজার্ভ কমার এই চিত্র দেখা যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৩১ আগস্ট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৩০৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় দুই উৎসের একটি প্রবাসী আয় ব্যাংক মাধ্যমে আসা কমেছে। গত দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) দেশে প্রবাসী আয় আসা সাড়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট সময়ের আমদানির দায় বাবদ ১৩১ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। অন্যদিকে, রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার বিক্রি করাও হচ্ছে। এসব কারণেই মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে।
বিভিন্ন খাতে শর্ত পূরণের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দিয়ে আইএমএফ ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে গত জানুয়ারি মাসের শেষে। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পেয়েছে বাংলাদেশ।
আইএমএফের ঋণের বিভিন্ন শর্তের মধ্যে একটি ছিল, গত জুনের মধ্যে রিজার্ভের মজুত হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী শুরু করতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও রিপোর্টিংয়ের মান বাড়ানোই ছিল উদ্দেশ্য। আরও শর্ত ছিল, রিজার্ভ থেকে গঠন করা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) বাদ দিতে হবে।
এ ছাড়া প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব করতে রিজার্ভের অর্থে গঠন করা লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ), বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে দেওয়া অর্থ এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে রিজার্ভ থেকে দেওয়া অর্থ বাদ দিতে হবে।
আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ২ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারে নেমেছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ ২ হাজার ৭৩৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গত মাস শেষে ছিল ২ হাজার ৯২০ কোটি ৬১ লাখ ডলার। যদিও ২০২১ সালে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উঠেছিল।
রাশিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল ও পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এতে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৯১৬ কেটি ডলার। তাতে ডলার–সংকটে পড়ে দেশ। এ কারণে ওই অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের পদক্ষেপ নেয়।
বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কিছু পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম ধরে রাখে। পরে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটলে ব্যাংকগুলোর হাতে ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনেই দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। ফলে, ডলার–সংকট কাটেনি।
অবশ্য ডলার–সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি খরচ তার আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ কমে হয় ৭ হাজার ৫০৬ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ৫৩৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম। গত বছরের জুলাইয়ে ৬৩৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।