ফরিদপুরে পেঁয়াজের দাম পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ
ফরিদপুরে দেশি পেঁয়াজের দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ১৪০ টাকায়। গত পাঁচ বছরে অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই সময় এটাই পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম।
জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৮১ থেকে ৮৫ টাকা, ২০২১ সালে ছিল ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, ২০২২ সালে ছিল ৫১ থেকে ৫৫ টাকা, ২০২৩ সালে ৯০ থেকে ৯৪ টাকা। এবার সেই পেঁয়াজের দাম ১৩৫ থেকে ১৪১ টাকা।
বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। অল্প কিছু পেঁয়াজ কৃষকদের কাছে অবশিষ্ট আছে। কৃষকেরা সেই পেঁয়াজ ধীরে ধীরে বাজারে ছাড়ছেন। ফরিদপুরের আড়তে পেঁয়াজের মজুত নেই, যা আছে এখন কৃষকদের কাছেই আছে।
পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে ফরিদপুর বাংলাদেশে দ্বিতীয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফরিদপুরে ৪২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছিল ৪৩ হাজার ২৫৫ টন। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে।
ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলায় পেঁয়াজের উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের খোঁয়াড় গ্রামের কৃষক মাফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর ৬৬ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করে ২০০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছেন। এতে তাঁর খরচ হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে ৩৫ মণ পেঁয়াজ পচে গেছে। এ পেঁয়াজ বিক্রি করাও যায়নি, আবার খাওয়াও যায়নি।
সালথা ও নগরকান্দার কৃষকদের আগ্রহ মূলত হালি পেঁয়াজ রোপণে। এই পেঁয়াজ ডিসেম্বর মাসে বপন করা হয় এবং এপ্রিল থেকে তোলা শুরু হয়। তবে এর আগে মুড়িকাটা পেঁয়াজ নভেম্বর থেকে রোপণ করা যায়। এই পেঁয়াজ ফেব্রুয়ারি নাগাদ বাজারে আসতে শুরু করে। তবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না বলে এই পেঁয়াজ রোপণে কৃষকদের আগ্রহ কম।
সালথা বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মালেক মোল্লা বলেন, কৃষকদের ঘরে জমানো পেঁয়াজ কমে আসছে। কৃষকেরাও পেঁয়াজ ছাড়ছেন অল্প অল্প করে। গত সোমবার বালিয়া বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল মণপ্রতি ৫ হাজার ৪০০ টাকা; মঙ্গলবার বোয়ালমারীতে বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ২০০ টাকা মণ।
মালেক মোল্লা আরও বলেন, এবার পেঁয়াজ উৎপাদন করতে গিয়ে কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে ১৫ দিন পর পেঁয়াজ রোপণ করতে হয়। প্রথম থেকেই পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যা ছিল, যদিও ফলন ভালো হয়েছিল। পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে হাইব্রিড পেঁয়াজ রোপণ করা হয়েছে। দেশি ছোট পেঁয়াজের পচনের মাত্রা কম, হাইব্রিড পেঁয়াজের পচনের মাত্রা বেশি। সে জন্য এবার পেঁয়াজের পচনের হার বেশি।
উৎপাদিত পেঁয়াজের উল্লেখযোগ্য অংশ সংরক্ষণের অভাবে পচে যায় বলে স্বীকার করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের জেলা বাজার কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয়, উৎপাদিত পেঁয়াজের ২০ শতাংশ সংরক্ষণের অভাবে পচে যায়।
এদিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণ শুরু করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। ফরিদপুরের সালতা ও নগরকান্দায় এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের ৬৫টি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি ঘরে ১২ টন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। সেখানে পেঁয়াজ রাখা গেলে পেঁয়াজ ভালো থাকে; পচনের হার শতকরা এক থেকে দুই ভাগে নেমে আসে।
জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ সাফল্যের পর সালথা ও বোয়ালমারীতে ৪৫টি করে আরও ৯০টি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে।