মানুষের পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে স্বপ্নের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ, ব্যবসাও ভালো

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন এসিআই লজিস্টিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরছবি: প্রথম আলো

এক প্যাকেটে ১০ টুকরো (২০০ গ্রাম) গরুর মাংস ও তিন টুকরো (১০০ গ্রাম) আলু। দাম ১৬০ টাকা। সাধারণত বাজারে এত কম পরিমাণে পণ্য বিক্রি হয় না। কিন্তু ১০ দিন ধরে গ্রাহকেরা এভাবেই পণ্য কিনতে পারছেন।

কম্বো (কয়েকটি পণ্য একত্রে বিক্রি) আকারে এভাবে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে এসিআই লজিস্টিকসের চেইনশপ ‘স্বপ্ন’। ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে থাকায় নতুন এ উদ্যোগ ইতিমধ্যে ভোক্তাদের মধ্যে বেশ সাড়াও ফেলেছে। পোশাকশ্রমিক, রিকশাচালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার মানুষেরা স্বপ্নের আউটলেট থেকে এসব পণ্য কিনছেন।

স্বপ্নের সাম্প্রতিক ব্যবসায়িক মডেল ও কম্বো পণ্য বিক্রির বিষয়ে জানাতে আজ রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এসিআই লজিস্টিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাব্বির হাসান নাসির। আলাপকালে তিনি জানান, দেশের নিম্ন ও সীমিত আয়ের অধিকাংশ মানুষেরই উচ্চ দামে মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। এতে তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখেই নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছে ‘স্বপ্ন’।

স্বপ্নের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের ২৪ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যাদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের পরিবারের। খরচ সামলাতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।

সাব্বির হাসান বলেন, দোকানে গেলে বিক্রেতারা এক কেজির কমে পণ্য দিতে চান না। আবার বেশি দামের কারণে মানুষেরা গরুর মাংস, মাছ ও ফলের মতো পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকছেন। এতে মাথাপিছু পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের পুষ্টিঘাটতি পূরণের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এ উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।

যেসব কম্বো পণ্য রয়েছে

চলতি মাসের শুরুতে কম্বো পণ্য বিক্রি শুরু করে স্বপ্ন। এ পর্যন্ত ২০-২৫ ধরনের কম্বো পণ্য বাজারে এনেছে তারা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকার গরুর মাংস ও আলুর প্যাকেজটি। গত ৯ দিনে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ এ প্যাকেজটি কিনেছেন।

এ ছাড়া ৬০ টাকায় দুই টুকরো রুই, একটি আলু, ১০০ টাকায় মুড়িঘন্টের উপকরণ, ৫০ টাকায় আট ধরনের সবজি দিয়ে নিরামিষ মিক্সড, ১৩৫ টাকায় চার টুকরো রুই ও বেগুন এবং ৬৫ টাকায় ল্যাটকা খিচুড়ির উপকরণ ও দুটি ডিমের প্যাকেজগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এক মাসের মধ্যে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০-১৫০ ধরনের কম্বো পণ্য বাজারে আনার পরিকল্পনা রয়েছে স্বপ্নের।

সারা দেশে স্বপ্নের ৫২০টি আউটলেট রয়েছে। এর মধ্যে এক শটি আউটলেটে কম্বো পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে। আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে দেশের সব আউটলেটে এসব পণ্য পাওয়া যাবে বলে জানান স্বপ্নের কর্মকর্তারা।

এসিআই লজিস্টিকসের এমডি সাব্বির হাসান বলেন, ‘আমরা প্রকৃত অর্থে একটি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। উচ্চ দামের কারণে যাঁরা একেবারেই মাংস কিনে খাওয়া বাদ দিয়েছিলেন, তাঁরাও এখন মাসে দুই-তিন বার মাংস খাওয়ার আশা করছেন। ছোট মধ্যবিত্ত পরিবারের সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারকে লক্ষ্য করে আমরা আরও নতুন নতুন প্যাকেজ আনার পরিকল্পনা করছি।’

নতুন এ পণ্য বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসায়ও ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে বলে জানান সাব্বির হাসান। তিনি বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ সময় আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। সেটি কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বাজার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন সাব্বির হাসান। তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে অনেকে শুধু সিন্ডিকেটের কথা বলেন। এটি ঠিক নয়। মাঝেমধ্যে সিন্ডিকেট থাকতে পারে, তবে আরও কারণ রয়েছে। দ্রব্যমূল্য কমাতে সরকার শুল্ক কমানোসহ যেসব রাজস্ব নীতি নিয়েছে, তা ভালো কাজ করছে। তবে সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি তথা সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঠিক কাজ করছে না। বরং সুদহার কমিয়ে পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’