সিলেট চেম্বারের পর্ষদকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে পদত্যাগের আহ্বান

আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্যকে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দিয়েছে ব্যবসায়ীদের একাংশ। গতকাল রোববার নগরের চৌহাট্টা এলাকায় আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে ব্যবসায়ীরা এ আহ্বান জানান। তাঁরা বর্তমান কমিটির সদস্যদের ‘স্বৈরশাসকের দোসর ও নির্বাচনবিহীন জুড়ে বসা’ বলে আখ্যায়িত করেন।

বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সিলেট জেলা ও মহানগরের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীবৃন্দের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সবাইকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়, পদত্যাগ না করলে চেম্বার ভবন ঘেরাও করে তালা দেওয়া হবে।

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সিলেট চেম্বারের সাবেক পরিচালক নুরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিলেট জেলা শাখার মহাসচিব ও সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুর রহমান রিপন। কর্মসূচি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল মুনিম মল্লিক ও সাংগঠনিক সচিব নিয়াজ মো. আজিজুল করিম।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কমিটি গঠন করা হয়েছে রাতের আঁধারে। এ কমিটি সাধারণ ব্যবসায়ীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁরা (বর্তমান কমিটি) ব্যর্থ কার্যক্রমের মাধ্যমে চেম্বারকে কলুষিত করেছেন। পর্ষদের নেতারা সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ না করলে ‘দালাল’ হিসেবে সমাজে তিরস্কৃত হবেন।

পাশাপাশি অবিলম্বে চেম্বারে নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটারদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা। তাঁরা চেম্বারের বর্তমান কমিটির যে ছয়জন পরিচালক পদত্যাগ করেছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়া অডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও বক্তব্য দেন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জিয়াউল হক জিয়া, সাবেক পরিচালক এজাজ আহমদ চৌধুরী, এনামুল কুদ্দুস চৌধুরী ও মুকির হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি সিলেট জেলা শাখার সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সিলেট জেলার সভাপতি খালেদ আহমদ, ভোগ্যপণ্য পরিবেশক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুজ্জামান জহির, আল-হামরা শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামসুল আলম, দরগাহ বাজার ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান দুদু, জেলা পার্টস মালিক সমিতির সভাপতি আনু আহমদ প্রমুখ।

মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, কোনো ধরনের নির্বাচন ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু ব্যবসায়ী চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি সমঝোতার মাধ্যমে ২০২৪-২৬ সাল মেয়াদে সর্বশেষ কমিটি গঠন করেছিলেন। এ সময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কমিটির ২২ জনকেই পরিচালক পদে নির্বাচিত করা হয়। এখন দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব চাইছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেম্বারের নির্বাচন যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে গঠনতান্ত্রিকভাবেই করা হয়েছে। এটা গোপনে করা কোনো কমিটি ছিল না।’ চেম্বারের কমিটি গঠনে রাজনৈতিক কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি।

চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিস্থিতিতে চেম্বারের ২২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ছয়জন ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। এদিকে সভাপতি তাহমিন আহমদ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. এমদাদ হোসেন ও সহসভাপতি এহতেশামুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করায় চেম্বারের জ্যেষ্ঠ পরিচালক মুজিবুর রহমান মিন্টুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।