বিমান পরিবহন বাড়াতে চায় ভারত, উদ্বেগে বিদেশি কোম্পানিগুলো
এয়ারলাইনস তথা বিমান পরিবহনশিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়েছে ভারত সরকার। কারণ, ১৩০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে রয়েছে বিমান পরিবহনের বিশাল বাজার। তাই অভ্যন্তরীণ ও লম্বা দূরত্বের বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট বা উড়ান কার্যক্রম পরিচালনা করা বেশ লাভজনক। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতকে বৈশ্বিক বিমান পরিবহন বাজারের শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে যেতে চায় মোদি সরকার। তবে তাদের অমন প্রচেষ্টায় উদ্বেগ বেড়েছে বিদেশি বিমান কোম্পানিগুলোর। খবর রয়টার্সের
এক দশক ধরে লোকসানে থাকা রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান পরিবহন কোম্পানি এয়ার ইন্ডিয়াকে বেসরকারি টাটা গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারত সরকার। এর কয়েক দিনের মধ্যেই টাটা গ্রুপ নতুন ৪৭০টি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই বিমান প্রস্তুতকারক কোম্পানি এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের সঙ্গে। কোম্পানিটি সব মিলিয়ে হাজারখানেক উড়োজাহাজ কেনার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে ভারত সরকার বিদেশি বিমান কোম্পানিগুলোকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্লাইট বা উড়ান বাড়ানোর অনুমতি দিচ্ছে না। এতে বিদেশি বিমান পরিবহন কোম্পানিগুলো চিন্তায় পড়েছে। ভারতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমান পাইলটদের এক সম্মেলনে কয়েকটি বিদেশি কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীরা তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
বিদেশি কোম্পানিগুলো ভারতে তাদের ফ্লাইট বা উড্ডয়ন সংখ্যা বাড়াতে চায়। পাশাপাশি ভারত থেকে অন্যান্য গন্তব্যেও বেশি করে উড়াতে চায় তাদের উড়োজাহাজ। এ জন্য তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের বাজার–সম্ভাবনা ভালো থাকলেও বিমান পরিবহনশিল্পে এখনো ভালো করছে না দেশটি। এক দশক ধরে লোকসান দিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী কোম্পানি এয়ার ইন্ডিয়া। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিকে টাটা গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর টাটা ৪৭০টি বিমান কেনার চুক্তির করায় ভারতের বিমান পরিবহন শিল্প নিয়ে বিতর্ক পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।
একজন ভারতীয় কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) এমিরেটস, তুরস্কের টার্কিশ এয়ারলাইনস ও কুয়েতের জাজিরা এয়ারওয়েজ—এসব সংস্থা ভারতে এবং ভারত থেকে অন্যান্য রুটে আরও বেশি করে উড়োজাহাজ উড়ানোর সুযোগ চায়। এমিরেটস এয়ারলাইনস ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে সপ্তাহে অতিরিক্ত ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের মতো সুবিধা চেয়ে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছে। এ ছাড়া ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়াও ভারত থেকে তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়াতে চায়।
টার্কিশ এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী বিলাল একসি সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত সিএপিএ ইন্ডিয়া সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা এই বাজার থেকে পর্যাপ্ত শেয়ার পাচ্ছি না।’
প্রায় ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারতে দূরপাল্লায় চলাচলকারী বিমানের সংখ্যা তুলনামূলক কম। বর্তমানে বেশির ভাগ ভারতীয় দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য বিদেশি বিমানেই চড়েন। এ জন্য ভারতের সরকারি–বেসরকারি খাদে দীর্ঘ পথে উড়োজাহাজের ফ্লাইট বা উড়ান পরিচালনায় উদ্যোগী হয়েছে। এতে ভারতে চলাচলকারী বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো যেমন প্রতিযোগিতায় পড়বে, তেমনি তা দুবাইয়ের মতো বিশাল আন্তর্জাতিক হাব বা কেন্দ্রকে নতুন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলবে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, সরকার বর্তমানে বিদেশি ফ্লাইট পরিচালনা বাড়ানো বা বিদ্যমান বিধিনিষেধ সহজ করার দিকে নজর দিচ্ছে না। বরং কীভাবে যাত্রীদের প্লেন পরিবর্তন করতে বাধ্য না করে তাঁদের চাহিদা মেটাতে আরও বড় জেটের ব্যবস্থা করা যায়, সেদিকে জোর দিতে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের ক্যারিয়ারগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেশি দখল নেওয়ার সময় এসেছে। সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।’
তবে ভারতের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এমিরেটসের প্রেসিডেন্ট টিম ক্লার্ক। তিনি বলেন, ‘কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। বাজারে এত বেশি ভোক্তার চাহিদা আছে যে আমরা কেউ এটি পূরণ করতে পারব না।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিদেশি বিমান কোম্পানিগুলোর ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো শিথিল করার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছে না ভারত। কারণ, দেশটি বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে ইতিপূর্বে হারানো বাজার পুনরুদ্ধার করতে চায়।
ফ্লাইট বা উড্ডয়ন কার্যক্রম পরিচালনাবিষয়ক পরামর্শক সংস্থা সিএপিএ ইন্ডিয়া কনসালট্যান্সির প্রধান কপিল কৌল বলেন, এটা স্পষ্ট যে সরকার আকার ও মানের দিক থেকে একটি মেগা-ক্যারিয়ার তৈরি করতে চায়। এ জন্য তারা কৌশলগত কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আরও ফ্লাইটের অনুমতি দিতে চাচ্ছে না।
তবে ব্যতিক্রমও আছে। ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল সচিব রাজীব বানসাল জানান, তাঁরা রাশিয়াকে আরও ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছেন।