ই–কমার্সের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে হিমশিম খাচ্ছে ভোক্তা অধিদপ্তর
২০২১ সালজুড়ে দেশের ই-কমার্স খাতে ছিল চরম অস্থিরতা। এখন অস্থিরতা কিছুটা কমে এলেও প্রতারণার শিকার হওয়া অনেকেই জমা দেওয়া ও বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাননি। এতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ বেড়েছে। এসব অভিযোগ নিস্পত্তি করতে হিমশিম খাচ্ছে ভোক্তা অধিদপ্তর।
সংস্থাটির তথ্যমতে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ২৫ হাজারের বেশি অভিযোগ পড়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে তিন হাজারের মতো অভিযোগ। নিষ্পত্তি না হওয়া অভিযোগ আছে ২২ হাজারের ওপরে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই অভিযোগ এসেছে ১২ হাজার ৪৬১টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৮ হাজার ৭১৩টি অভিযোগ।
তাতে সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে ৩০ হাজারের কাছাকাছি অনিষ্পন্ন অভিযোগের মধ্যে ই-কমার্স বা অনলাইন কেনাকাটাসংক্রান্ত অভিযোগ আছে ১৬ হাজারের ওপর। অর্থাৎ ই-কমার্সের প্রায় অর্ধেক অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পারেনি সংস্থাটি।
যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আসছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অনেকে আছেন, যারা অনেক পুরোনো অভিযোগ নিয়েও আসছেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি কিছু ভোক্তা অর্থ ফেরত পাওয়ার পর অনেকেই ভাবছেন, তাঁরাও টাকা ফেরত পেতে পারেন। ফলে অনেকে পুরোনো অভিযোগ নিয়ে আসছেন। তবে এসব অনেক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। আবার এমন হচ্ছে যে কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে, কিন্তু পরে তাদেরও আর পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো তারা আর ব্যবসা করবে না বলে বাকি টাকা ফেরত দিতে চাইছে না।
এ ব্যাপারে সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ই-কমার্স খাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ছে। কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। যোগাযোগ না করতে পারলে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের কর্মকর্তারা বিদেশে চলে গেছেন, এমন সংবাদও আছে। তাতে আমাদের জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে।’
এই বাস্তবতায় এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বা তাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে কোনোভাবে টাকা উদ্ধার করা যায় কি না, তা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সফিকুজ্জামান।
জানা গেছে, ভোক্তা অধিদপ্তরে ই-কমার্স খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে আলোচিত ইভ্যালির বিরুদ্ধে। এরপর আছে আলেশা মার্ট, কিউ কম, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা ও দালাল প্লাস। আর খাত হিসেবে অনলাইন কেনাকাটার পরে আছে পণ্য খাত নিয়ে অভিযোগ। এ ছাড়া টেলিকম সেবার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। বেশির ভাগ অভিযোগের ধরন এ রকম—সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ না করা, দাম বেশি নেওয়া, প্রতিশ্রুতি অনুসারে সেবা না দেওয়া, মানহীন পণ্য বা সেবা ইত্যাদি।
মানুষ সরাসরি ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেয় তারা। এখন থেকে www. dncrp.com শীর্ষক পোর্টালের মাধ্যমেও ঘরে বসে অভিযোগ করা যাবে। শুনানির তারিখ জানানো হবে খুদে বার্তায়। নতুন এই পোর্টালের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তির হালনাগাদও জানা যাবে।
এ ছাড়া ভোক্তাদের অভিযোগ গ্রহণে ওয়েবসাইটে একটি পাতা আছে। এটি সরকারি সব সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পাতা। এই পাতাও থাকবে। ভোক্তা অধিদপ্তর এখন সরকারি এই পাতার সঙ্গে নতুন ওয়েবসাইটের সমন্বয় ঘটানোর কাজ করছে। এটা হয়ে গেলে ভোক্তা অধিদপ্তরে করা অভিযোগ আরও দ্রুত নিষ্পত্তি ও তদারক করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।