রাজস্ব আদায়ের ঘাটতিতে অসন্তুষ্ট আইএমএফ

বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। রাজস্ব আদায় কেন কম হচ্ছে, তা জানতে চেয়েছেন সংস্থাটির সফররত একটি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত কত টাকা করছাড় দেওয়া হয়েছে, সেটিও তাঁরা জানতে চেয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান ও সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। পরে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে এসব বৈঠক হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে। কেন এত বড় ঘাটতি হলো, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। তারা এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের নতুন পরিকল্পনা তৈরির পরামর্শ দিয়েছে। এ অবস্থায় এনবিআর কর্মকর্তারা দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার উল্লেখ করে আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য কমানোর অনুরোধ জানান।

এদিকে গত কয়েক বছরে কত শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এই করছাড় যৌক্তিক হারে কমানোর সুপারিশ করেছে আইএমএফের সফররত প্রতিনিধিদলটি। এনবিআরের শুল্ক বিভাগের হিসাব অনুযাযী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। আয়কর বিভাগও আলাদা হিসাব করেছে। তারা জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার আয়কর ছাড় দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে তথা করপোরেট করে ৮৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বা ৬৮ শতাংশ এবং ব্যক্তিপর্যায়ের করদাতাদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বা অটোমেশন ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য আইএমএফ তাগিদ দিয়েছে। এ ব্যাপারে সহায়তা করবে সংস্থাটি।

রাজস্ব খাত সংস্কারের স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি একটি কৌশলপত্র দেখতে চায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এ জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নে সংস্থাটি সহায়তা করবে বলে জানায়।

বর্তমানে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে তিন কিস্তির অর্থ ছাড় হয়েছে। এর বাইরে নতুন করে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বাড়তি ঋণ নিয়েও এখন আলোচনা চলছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইএমএফের সফররত প্রতিনিধিদল বৈঠক করে চলেছে। দলটি আগামী মাসে এই সফরের ওপর প্রতিবেদন দেবে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভায়। এ দলের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই আইএমএফের পর্ষদ বাংলাদেশকে নতুন ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।