বিদেশি পেঁয়াজ অর্ধশতক ছাড়িয়েছে, শতকের পথে দেশি জাত
বাজারে আবারও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বেশি। তুলনামূলক কম বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। তাতে কেজিপ্রতি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। আর শতক স্পর্শ করার পথে দেশি পেঁয়াজের দাম।
বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বছরের এ সময়ে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে আসার কারণে এই পণ্যের দাম বাড়ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা; এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। তাদের হিসাবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা।
তুলনামূলক কম বাড়লেও বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বাড়তি। টিসিবির তথ্যানুযায়ী, আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি এখন ৪৫–৫৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৪০–৪৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহে কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
তবে এই দুই ধরনের পেঁয়াজের যে দাম টিসিবি জানিয়েছে, আজ বুধবার ঢাকার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে দেশি পেঁয়াজ আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এ ধরনের পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০–৯০ টাকা। পাড়া–মহল্লার দোকানে কোথাও কোথাও দাম আরও বেশি।
রাজধানীর কাঁটাবন এলাকায় ভাই ভাই স্টোরের মালিক আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সপ্তাহখানেক হলো পেঁয়াজের দাম বাড়তি। কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৯০ টাকায়। পরিমাণে বেশি নিলে বা পরিচিত ক্রেতা হলে একটু কমও রাখি। পেঁয়াজ কিনে দোকানে নিয়ে আসতে দাম পড়ে যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকার আশপাশে।’
আমির হোসেন জানালেন, আমদানি করা পেঁয়াজ তিনি ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। দাম নিয়ন্ত্রণে তিনি বাজারে তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ একটু কমেছে, তাতেই বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এর আগে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর সরকার গত জুন মাসের ৫ তারিখে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম খুব একটা কমেনি। তবে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় নেমেছিল। এখন সেটাও বাড়তির দিকে।
রাজধানীর শ্যামবাজার পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে কৃষকের কাছে যে পেঁয়াজ ছিল, তা এখন শেষের পথে। তাতে দেশি পেঁয়াজের দাম একটু ওঠানামা করছে, যদিও খুব বাড়তি বলা যাবে না। এ সময়ে সাধারণত আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করতে হয়। আবার আমদানি মূল্যও কিছুটা বেড়েছে। সব মিলিয়ে তাই বাজার ওঠানামার মধ্যেই আছে।’
নতুন ফসল আসার আগ পর্যন্ত বছরের বাকি সময় মোটামুটি একটু বেশি দামেই পেঁয়াজ কিনতে হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
কয়েক বছর ধরে দেশে বার্ষিক পেঁয়াজ উৎপাদন কমবেশি ৩৫ লাখ টনের মতো হচ্ছে। সংরক্ষণ সমস্যার কারণে উৎপাদিত পেঁয়াজের ২০–২৫ শতাংশ নষ্ট হয়। চাহিদা মেটাতে কিছু পরিমাণে পেঁয়াজ বিদেশ থেকে, বিশেষ করে ভারত থেকে আমদানি করা হয়। আগে ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি ছিল। তবে দেশে ভালো উৎপাদনের ফলে সেই নির্ভরতা অনেকটা কমে এসেছে।