কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা, অনলাইনে আয়কর পরিশোধের খরচ কমল

আয়কর রিটার্নগ্রাফিকস: প্রথম আলো

ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং বিকাশ, নগদ বা রকেটের মতো এমএফএস সেবা অথবা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আয়কর পরিশোধ করার খরচ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজ বুধবার দেশের সব ব্যাংক, মোবাইলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) এবং লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (পিএসপি) উদ্দেশে এ–সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এখন থেকে কার্ড ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে আয়কর পরিশোধ করলে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেনে গ্রাহকদের কাছ থেকে লেনদেন প্রতি ২০ টাকা এবং ২৫ হাজার টাকার বেশি হলে লেনদেন প্রতি সর্বোচ্চ ৫০ টাকা আদায় করা যাবে। এমএফএস অথবা পিএসপি ওয়ালেট ব্যবহারের মাধ্যমে লেনদেন হলে গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া যাবে লেনদেন প্রতি ১ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। এই মাশুলের মধ্যেই মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অন্তর্ভুক্ত।

 কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এমএফএস/পিএসপির মাধ্যমে আয়কর পরিশোধের ক্ষেত্রে বেশি হারে মাশুল (ফি) কেটে রাখা হচ্ছে জানিয়ে গত ২৭ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে এ মাশুল কমানোর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এর ১৭ দিন পর আজ নির্দেশনাটি জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আয়কর পরিশোধের মাশুল হার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর জারি করা একটি প্রজ্ঞাপন রয়েছে। ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এত দিন ১ দশমিক ৬ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হচ্ছিল। এনবিআরের চিঠিতে বলা হয়, এত বেশি হার থাকার কারণে ইলেকট্রনিক পদ্ধতির রিটার্নে (ই-রিটার্ন) আয়কর পরিশোধ কার্যক্রম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। অনলাইনে আয়কর পরিশোধের মাশুল হতে পারে সর্বোচ্চ ২০ টাকা।

 এনবিআরের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কী করছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা শিখা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনবিআরের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আজ নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে গ্রাহকদের খরচ একটু কমবে।’

 চলতি ২০২৪-২৫ কর বছরের রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজীকরণের জন্য এনবিআর করদাতাদের জন্য গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি উন্মুক্ত করেছে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্য করতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা রয়েছে। এনবিআরের চিঠিতে এসব কথাও বলা হয়েছে।

‘না দাঁড়িয়ে লাইনে, রিটার্ন দিন অনলাইনে’—এটা হচ্ছে ই-রিটার্নের স্লোগান। চলতি অর্থবছরে অনলাইনে ১৫ লাখ রিটার্ন জমা পড়বে বলে আশা করছেন এনবিআরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর দিয়ে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যায়।

 এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাশুলটা আসলেই বেশি। এটা কমিয়ে ২০ টাকার মধ্যে রাখতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা জারির পর এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

 সম্প্রতি চার সিটি করপোরেশনে অবস্থিত সরকারি কর্মচারী, সারা দেশের তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা, মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তা এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ম্যারিকো, বার্জার পেইন্টস, বাটা শু কোম্পানি ও নেসলের কর্মীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে এনবিআর। কোনো সমস্যায় পড়লে এনবিআরের কল সেন্টারের সহায়তা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চালু থাকা কল সেন্টারের নম্বর ০৯৬৪৩৭১৭১৭১। অনলাইনে দাখিল করা রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, টিআইএন ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারবেন করদাতারা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ৫১ কোটি টাকা খরচ করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার পদ্ধতি ২০১৬ সালেই চালু করেছিল এনবিআর। করদাতাদের আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় ২০১৯ সালে সংস্থাটি ওই পদ্ধতি বন্ধ করে দেয়। কোভিড-১৯ চলাকালীন ২০২০ সালের নভেম্বরে এনবিআর নিজের জনবল দিয়ে দুই কোটি টাকা খরচ করে নতুন পদ্ধতি চালু করে। এটিই চলমান। সরকারি-বেসরকারি ৪৭ ধরনের সেবা পাওয়ার জন্য বর্তমানে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার রসিদ থাকা বাধ্যতামূলক।