বেড়েছে সবজি ও মাছের দাম
সবজির বাজারে দামের দাপটে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কাঁচা মরিচ। পেঁয়াজ ও আলুর দামও বাড়তি।
ঈদের পর ঢাকার বাজারগুলোতে পণ্যের সরবরাহ কম। তাতে সবজি ও মাছের দাম বেড়েছে। কাঁচা মরিচের বাজারের অস্থিরতা এখনো কাটেনি। অন্যান্য সবজির মতো ঈদের পর আলুর দামও বাড়তি। আর চিনির সংকট দিন দিন আরও গভীর হচ্ছে। নতুন করে সামান্য বাড়ছে পেঁয়াজের দামও। সব মিলিয়ে বাজারে ক্রেতাদের জন্য সুখবর নেই বললেই চলে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও কলমিলতা বাজার, মহাখালী বাজার ও মগবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট এখনো বন্ধ। ঈদের পর সবাই দোকান খোলেননি। তাতে মাছ ও সবজির সরবরাহ কম, দাম বাড়তি। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। ঈদের আগে একই আলুর দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। বেগুনের দামও বেড়েছে। বড় আকারের কালো বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, ঈদের আগে যা ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। করলার দাম ছুঁয়েছে ১০০ টাকা কেজি। দরদাম করে নিলেও ৯০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যান্য সবজির মধ্যে কাঁকরোলের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ঝিঙে, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুলের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সস্তার সবজি হিসেবে পরিচিত পেঁপের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। শসার দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। টমেটো ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। তবে আমদানি করা টমেটোর কেজি পড়ছে ২০০ টাকার আশপাশে।
ঈদের পরে বাজার এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। সবজি আসছে কম। তাতে দাম একটু বেড়েছে। এর মধ্যে বেশি বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।আবু বকর, মহাখালী বাজারের সবজি বিক্রেতা
সবজির বাজারে দামের দাপটে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কাঁচা মরিচ। ঈদের আগে থেকে কাঁচা মরিচের দাম বাড়তে থাকলেও ঈদের ছুটিতে রীতিমতো তেতে ওঠে। কেজি ৭০০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠলেও এখন কিছুটা কমেছে। তবু এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনতে গেলে ক্রেতাদের খরচ করতে হবে ন্যূনতম ৪০০ টাকা। মানভেদে ৪৫০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী বাজারের সবজি বিক্রেতা আবু বকর প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের পরে বাজার এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। সবজি আসছে কম। তাতে দাম একটু বেড়েছে। এর মধ্যে বেশি বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।
আমদানি সত্ত্বেও ঈদের পর বাজারে পেঁয়াজের দাম একটু বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দামও ঈদের পর বেড়েছে। ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
মগবাজারের ক্রেতা আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের পর পেঁয়াজ-মরিচের মতো পণ্যের দাম কমে আসবে ভেবেছিলাম। এখন দেখছি পরিস্থিতি উল্টো দিকে যাচ্ছে।’ কোনো পণ্যের দাম বাড়লে আর কমে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘এক মাস আগের চেয়ে প্রতিটি মাছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। এতে আমাদের বেচাকেনা কমেছে। ব্যবসা করা কঠিন হয়ে গেছে।’আনাস উদ্দিন, মহাখালী বাজারের মাছ বিক্রেতা
কোরবানির ঈদের পর বাজারে মাংসের চাহিদা কম থাকে। তাতে স্বাভাবিকভাবে মাংসের সরবরাহ কম। দামও বেশি না। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। সোনালি মুরগির কেজিও ৩০০ টাকার নিচে। তবে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে মাছের দাম। ক্রেতারা মাছ কিনতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। নদী ও হাওরের মাছ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে গেছে অনেক আগেই। চাষের মাছও এখন বেশ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের আগে এক কেজি ছোট ও মাঝারি আকারের পাঙাশের দাম ছিল ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, সেই একই পাঙাশ এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। দাম বেড়ে তেলাপিয়া মাছের কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। মাঝারি ও বড় মানের তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। ঈদের আগে যা ছিল ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। চাষের কই বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ টাকার ওপরে। আর ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের চাষের রুই মাছের দাম হাঁকানো হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি।
মহাখালী বাজারের মাছ বিক্রেতা আনাস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক মাস আগের চেয়ে প্রতিটি মাছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। এতে আমাদের বেচাকেনা কমেছে। ব্যবসা করা কঠিন হয়ে গেছে।’
‘৫ কেজি চিনি কারওয়ান বাজার থেকে নিয়ে এসেছি। খরচ বাদে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি না করলে লোকসান হবে।’আলিফ হোসেন, তেজগাঁও কলমিলতা বাজারের মানিক মিয়া স্টোরের বিক্রেতা
চিনির সংকট কাটেনি
গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও কলমিলতা বাজার, মহাখালী বাজার ও মগবাজারের ১৭টি মুদিদোকান ঘুরে মাত্র ৫টি দোকানে চিনি পাওয়া গেছে। অধিকাংশ দোকানি বলেছেন, কোম্পানিগুলো চিনি না দেওয়ায় তাঁরা চিনি পাচ্ছেন না। পাইকারি বাজারেও চিনির সংকট। যে কটি দোকানে চিনি পাওয়া গেছে, তাঁরা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
তেজগাঁও কলমিলতা বাজারের মানিক মিয়া স্টোরের বিক্রেতা আলিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ কেজি চিনি কারওয়ান বাজার থেকে নিয়ে এসেছি। খরচ বাদে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি না করলে লোকসান হবে।’