২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ঈদের পরে ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের ঘোষণা মেয়রের

আজ বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার ব্যবস্থার উদ্বোধন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
প্রথম আলো

বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তহবিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুই কোটি টাকা অনুদান দেবে। মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই অর্থ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ব্যবহৃত হবে।

আজ বুধবার বেলা ১টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার ব্যবস্থার উদ্বোধন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ জায়গায় বসিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। ঈদের পর ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ও বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, প্রতিকূলতা মধ্যেও ব্যবসায়ীদের বসানোর ব্যবস্থা হলো। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আবার ব্যবসা শুরু করতে পেরেছেন। তাতে পুরো ক্ষতি কাটিতে উঠতে সময় লাগলেও অন্তত ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ তৈরি হলো৷

আরও পড়ুন

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক দুরভিসন্ধিমূলক কাজ হতে পারত, তবে নিরাপত্তা জোরদার করায় সেটা হতে পারেনি—এমন কথা উল্লেখ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র আরও বলেন, ‘৩ হাজার ৮৪৫টি দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। আগুনে দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেলেও এই ব্যবসায়ীরা সাহসের সঙ্গে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছেন। আমরা তাঁদের সব ধরনের সহায়তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ব্যবসাবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তরিকতার সঙ্গে এই কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, আগুনের লেলিহান শিখা বঙ্গবাজারকে পুড়িয়ে দিলেও ব্যবসায়ীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। ব্যবসায়ীদের দিকে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সবাইকে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানান তিনি।

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের অনুদান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন ব্যক্তির মন্তব্যের ব্যাপারে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওই ব্যক্তি বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নন। কিন্তু দেশের সেরা ক্রিকেটারকে নিয়ে তাঁর একটি বিরূপ মন্তব্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।’ একজন সম্মানজনক ব্যক্তিকে হেয় করাকে উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীরা এমন অসম্মানজনক বক্তব্যের পক্ষে নন।

এদিকে বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীরা চৌকি পেতে বেচাকেনা শুরু করেছেন। তবে প্রচণ্ড রোদে ক্রেতা আসছেন কম। বিকেল থেকে ক্রেতা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। মেয়রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে আজ বুধবার রাতের মধ্যে অস্থায়ী এসব দোকানের জন্য শামিয়ানা টানানো হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হওয়া বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিট (বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, মহানগরী ও আদর্শ) মিলে মোট দোকান ছিল ২ হাজার ৯৬১টি। এখন এই দোকানগুলোর চিহ্ন নেই। এ ছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে ৭৯১টি, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে ৫৯টি ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ৩৪টি দোকান আগুনে পুড়েছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুন

সিটি করপোরেশনের তদন্ত প্রতিবেদনে অবশ্য অ্যানেক্সকো টাওয়ারে কতটি দোকান পুড়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। এই মার্কেট কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যানেক্সকো টাওয়ারের প্রায় সব দোকানের বিমা করা আছে। এই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অ্যানেক্সকো টাওয়ারে আগুনে পুড়ে ও পানিতে ভিজে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আরও শতাধিক দোকানে। সেই হিসাবে ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বঙ্গবাজার এলাকায় সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বঙ্গবাজারে সব মিলিয়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মার্কেটগুলোর কাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকার বেশি। তবে দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের মানবিক-মানসিক বিপর্যয়সহ ক্ষতির পরিমাণ এবং চাকরিহীনতার আর্থিক মাপকাঠি নিরূপণ করা দুরূহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।