রিহ্যাবের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট কাল, সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়েও আছে শঙ্কা
বিভিন্ন ঘটনার পর অবশেষে আগামীকাল মঙ্গলবার আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হচ্ছে। রাজধানীর খামারবাড়ীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে সংগঠনের ২৯ জন পরিচালক নির্বাচিত করতে ভোট দেবেন ৪৭৬ জন ভোটার।
তবে ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দুই প্যানেলের প্রার্থীরা। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, আজ সোমবার কেআইবির সামনে বহিরাগত লোকজনকে মহড়া দিতে দেখা গেছে। ভোটারদের পরিচয়পত্র (আইডি) এখনো দেওয়া হয়নি। ভোটকেন্দ্র থেকে পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেখে আইডি কার্ড দিতে নির্বাচন বোর্ডকে অনুরোধ জানালেও সে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি।
এবারের নির্বাচনে চারটি প্যানেলে ৯৩ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। প্যানেলগুলো হচ্ছে রিহ্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ, সেঞ্চুরি রিয়েলটির চেয়ারম্যান এম জি আর নাসির মজুমদারের নেতৃত্বে ডেভেলপারস ফোরাম, রিহ্যাবের সাবেক সহসভাপতি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে নবজাগরণ প্যানেল এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশনের এমডি ইন্তেখাবুল হামিদের নেতৃত্ব জয় ধারা প্যানেল।
রিহ্যাবের পরিচালনা পর্ষদের ২৯ পদের মধ্যে ঢাকায় ২৬টির বিপরীতে ৮৬ জন প্রার্থী হয়েছেন। আর চট্টগ্রামের ৩টি পরিচালক পদের বিপরীতে আছেন ৭ জন। তবে জয় ধারা ও আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ সব কটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ডেভেলপারস ফোরাম ও নবজাগরণ প্যানেল যথাক্রমে ১০ ও ১৯ জন করে প্রার্থী দিয়েছে; চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাদের কোনো প্রার্থী নেই।
রিহ্যাবের এই নির্বাচন গত সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই নির্বাচনের কমিশন গঠন এবং ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে নির্বাচন স্থগিত হয়। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয় সংগঠনের সব ব্যাংক হিসাব। একই সঙ্গে নভেম্বরের শেষ দিকে রিহ্যাবের তৎকালীন কমিটির বর্ধিত মেয়াদ স্থগিত করে প্রশাসক বসায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রশাসক পদে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌস দায়িত্ব নেন। তারপর নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা হয়।
নির্বাচনপ্রক্রিয়ার একপর্যায়ে সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেন সংগঠনের কয়েকজন সাবেক নেতা। তারই অংশ হিসেবে প্রার্থীদের সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে মতবিনিময় সভা করেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সভায় তিনি প্রার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন। ওই দিন সকালে নির্বাচনের তফসিল সংশোধন করে নির্বাচন বোর্ড। এতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ভোটের তারিখ পিছিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি করা হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা এর আগেই অর্থাৎ ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছিল। পরে অবশ্য প্রতিমন্ত্রী চার প্যানেল নেতাদের সঙ্গে সভা করে বলেন, নির্বাচন হবে। কোনো সিলেকশন হবে না।
ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে সেটি নিয়ে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। প্রথমে ভোটের জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) নির্ধারণ করে নির্বাচন বোর্ড। পরে সেই কেন্দ্র পরিবর্তন করে গুলশান শুটিং ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি খামারবাড়ীর কেআইবি চূড়ান্ত করা হয়। সেখানে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে এমন অভিযোগে পাঁচ তারকা হোটেলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি করে অন্তত দুটি প্যানেল। একটি পাঁচ তারকা হোটেল বুকিংয়ের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও শেষ পর্যন্ত কেআইবিতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন বোর্ড। তার আগেই অবশ্য নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদেও পরিবর্তন আসে।
রিহ্যাব জানিয়েছে, কেআইবির কনভেনশন হল-২-তে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে সংগঠনটির ২০২৪-২৬ মেয়াদি দ্বিবার্ষিক পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলবে। ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের প্রার্থী লিয়াকত আলী ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ভোট সুষ্ঠু ও বাধাহীন হওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তিনটি প্যানেল ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের দাবি করেছিল। আর একটি প্যানেল চাইছিল, কেআইবিতেই ভোট হোক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশন শক্ত অবস্থানে থাকলেই কেবল সুষ্ঠু ভোট সম্ভব।
অন্যদিকে ডেভেলপারস ফোরামের লিডার এম জি আর নাসির মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে ভোটকেন্দ্রে বহিরাগত লোকজন মহড়া দিয়েছে। এমন অবস্থা থাকলে কীভাবে সুষ্ঠু ভোট হবে। আমরা এনআইডি দেখে ভোটারদের আইডি কার্ড দিতে নির্বাচন বোর্ডকে অনুরোধ করেছিলাম। ভোটকেন্দ্রের বাইরে মিছিল করা নিষেধ করেছিলাম। কিছুই হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সুব্রত কুমার দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করব। এনআইডি কার্ড দেখে ভোটার পরিচয়পত্র দেওয়ার কোনো বিধান নেই। ফলে সেটি আমরা করতে পারব না। তবে ভোটারদের যাচাই-বাছাই করে আইডি কার্ড দেওয়া হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের বিষয়ে যা যা করার দরকার, করা হবে।’ ভোটকেন্দ্রে বহিরাগতদের মহড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই ভোটকেন্দ্র এসে দেখে যাচ্ছেন। তা ছাড়া আজকে একাধিক অনুষ্ঠানও আছে। কেউ মহড়া দিচ্ছে না বলে জানান তিনি।
নির্বাচনে লড়ছেন যাঁরা
জয় ধারা প্যানেলের ঢাকার প্রার্থীরা হলেন ইন্তেখাবুল হামিদ, মুরাদ ইকবাল চৌধুরী, মো. রেজাউল করিম খান, এন জোহা, আবদুর রহমান, মো. মাহীর আলী খান রাতুল, আসাদুর রহমান জোয়ার্দ্দার, শহীদ রেজা, শরীফ আজিজুল হাসান, এ কে এম বরকতউল্লাহ, শরীফ আলী খান, শাহ মোমরেজ চৌধুরী, এস এম জাহিদুল ইসলাম, মো. মিজানুর রহমান, কে এফ এম রাজিউল্লাহ, মো. রবিউল হাসনাত, এ এফ এম কামাল উদ্দিন, মো. রেজাওয়ানুল হক, মো. মোস্তফা কামাল, মো. কামরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আল-আমিন, আমাতুন নূর, এস এম এমদাদ হোসেন, মো. সুলতান মাহমুদ, মো. ইমামুল হাসান ও মাসুদা সিদ্দিক রোজী।
আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের ঢাকার প্রার্থীরা হলেন মো. ওয়াহিদুজ্জামান, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল লতিফ, মো. মনজুরুল ফরহাদ, লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, মো. মোবারক হোসেন, মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস, মো. মহসিন মিয়া, মো. ফারুক আহমেদ, সুরুজ সরদার, দেওয়ান নাসিরুল হক, মো. কামরুল ইসলাম, এ এফ এম ওবায়দুল্লাহ, সেলিম রাজা, মিরাজ মোক্তাদির, মো. হারুন-অর-রশিদ, এম এ আউয়াল, মোহাম্মদ আলীমুল্লাহ, মুহাম্মদ লাবিব বিল্লাহ, শেখ মো. শোয়েব উদ্দিন, মো. আইয়ুব আলী, মুহাম্মদ শামীম, শেখ কামাল, মো. শেখ সাদী, মো. ইমদাদুল হক ও মো. জয়নাল আবেদীন। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই প্যানেলের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন, মুহাম্মদ জাফর ও মো. মোরশেদুল হাসান।
ডেভেলপারস ফোরামের প্রার্থীরা হলেন আরশি হায়দার, এম জি আর নাসির মজুমদার, সাঈদ পারভেজ রেজা লতিফ, মালিক হাফিজুল আলম, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, এম এ সাঈদ, এ জেড এম কামরুদ্দিন, এস এম পলাশ, খালেদুর রহমান ও সুজন শর্মা।
নবজাগরণ প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন নজরুল ইসলাম, নাইমুল হাসান, মো. আল আমিন, এম রুহুল আমিন, সৈয়দ মো. জুনায়েদ আনোয়ার, মো. জসিম উদ্দিন, রাফিদ চৌধুরী, মো. আনোয়ারুল ইসলাম ভূঁঞা, মো. আকবর হোসেন আরিফ, জেড এম গোলাম নবী, মো. মহিউদ্দিন সিকদার, এ জে এম সাজেদুর রহমান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মনির আহমেদ, মো. বিল্লাল হোসেন আখন্দ, মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির, এন এম নুর কুতুবুল আলম, মো. ওবায়দুর রহমান তালুকদার এবং মো. মনির হোসেন।
প্রার্থীদের মধ্যে চার প্যানেলের বাইরে যাঁরা আছেন—মাসুদ মনোয়ার, প্রদীপ কর্মকার, মো. এমদাদুল হোসেন, এ এস এম আব্দুল গাফফার মিয়াজী প্রমুখ।