পর্যটন মেলায় হোটেল-রিসোর্ট আর উড়োজাহাজের টিকিটে যত ছাড়
মেলায় অংশ নেওয়া এয়ারলাইনস, হোটেল-রিসোর্ট, ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর ও পর্যটন-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম একটি স্টলে জানতে চাইলেন, এখন বুকিং দিয়ে তিনি কি আগামী আগস্টে উড়োজাহাজের টিকিটে ছাড় পাবেন? জবাবে ওই স্টলের কর্মকর্তা বলেন, ছাড় শুধু নির্ধারিত সময়ের জন্য দেওয়া হয়। সাধারণত টিকিট বুকিংয়ের গতি, আসনের ধরন ও অবস্থান—এসবের ওপর নির্ভর করে ছাড়।
আশরাফুল ইসলামের মতো আরও অনেককেই গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠানরত ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় বিভিন্ন এয়ারলাইনস, তথা বিমান পরিবহন সংস্থার স্টলে টিকিট-সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন করতে দেখা যায়। তাঁদের অধিকাংশেরই প্রধান আকর্ষণ ছিল, উড়োজাহাজের টিকিটে ছাড় পাওয়া ও বুকিং দেওয়া নিয়ে। এদিকে দর্শনার্থীদের একটি অংশ আবার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের স্টলগুলোয় ভিড় করেন, যাঁরা কয়েক দিনের জন্য দেশের ভেতরে বা প্রতিবেশী দেশগুলোয় যেতে চান।
ভ্রমণ ও পর্যটনবিষয়ক প্রকাশনা বাংলাদেশ মনিটরের আয়োজনে ‘বিমান ঢাকা ট্রাভেল মার্ট’ শীর্ষক এই পর্যটন মেলা শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার, যা আজ শনিবার শেষ হবে। মেলাটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে। জনপ্রতি প্রবেশমূল্য বা টিকিটের দাম ৫০ টাকা। আয়োজকেরা জানান, এবারের মেলায় ১০৩টি দেশি-বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এয়ারলাইনস, হোটেল-রিসোর্ট, ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, মেডিকেল ট্যুরিজম এজেন্সিসহ ভ্রমণ ও পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তাঁদের ধারণা, এবারও দর্শনার্থীর সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ হাজারের মধ্যে থাকবে।
উড়োজাহাজের টিকিটে যত ছাড়
গতকাল মেলায় গিয়ে দেখা যায়, সৌদি এয়ারলাইনস সব গন্তব্যের যাত্রীদের জন্য ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। তবে এই সুবিধা শুধু মেলার গ্রাহকদের জন্যই নয়, বরং এটি তাদের বৈশ্বিক আয়োজন। এই সুবিধা পেতে চাইলে যাত্রীকে আগামী ১-৩০ এপ্রিলের মধ্যে ভ্রমণ করতে হবে। আর টিকিট বুকিং করতে হবে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে, যা শুরু হয়েছে মেলা শুরুর দিন, অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি।
মেলা উপলক্ষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস শুধু আন্তর্জাতিক গন্তব্যের টিকিটে ছাড় দিচ্ছে। তা হচ্ছে, মেলায় টিকিট বুকিং দিলেই মিলছে ১৫ শতাংশ ছাড়। ভ্রমণ করতে হবে ছয় মাসের মধ্যে।
বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস মেলা উপলক্ষে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ১২ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ১৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। তবে ২১ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং ৪ থেকে ১৪ এপ্রিল সময়ের ভ্রমণকারীরা এই ছাড় পাবেন না বলে প্রথম আলোকে জানান সংস্থাটির জুনিয়র এক্সিকিউটিভ ফাতেমা আক্তার। ইউএস-বাংলার এই ছাড় পেতে হলে ভ্রমণ করতে হবে ১৫ মের মধ্যে।
আরেক বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা নভোএয়ারের উপব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, তাঁরা আন্তর্জাতিক (কলকাতা) ও অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিটে ১৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটি ভ্রমণের জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি।
মালদিভিয়ান এয়ারলাইনস একজনের জন্য ৪ দিন ৩ রাত ২৫ হাজার টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আর ৫ দিন ৪ রাতের প্যাকেজে গুনতে হবে ৩১ হাজার টাকা। এই প্যাকেজে হোটেলে সকালের নাশতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
হোটেল-রিসোর্টের ছাড়
বিভিন্ন হোটেল-রিসোর্টও মেলায় এসেছে বিশেষ ছাড় নিয়ে। কক্সবাজারের সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এক রাত থাকার খরচে তিন রাত থাকার সুবিধা দিচ্ছে। রিসোর্টটির একটি কক্ষের সর্বনিম্ন ভাড়া ১৯ হাজার ৮০০ টাকা। মেলায় বুকিং দিয়ে ৩১ মে পর্যন্ত এই সুবিধা নেওয়া যাবে। ওশান প্যারাডাইস দিচ্ছে ৬০ শতাংশ ছাড়। তাদের ডিলাক্স রুমের সর্বনিম্ন ভাড়া ৪ হাজার টাকা, আর সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। এখন বুকিং দিয়ে ৫ এপ্রিলের মধ্যে ঘুরে আসতে হবে। হোটেল দ্য কক্স টুডে উড়োজাহাজে আসা-যাওয়ার টিকিটসহ দুজনের জন্য ৩ দিন ২ রাতের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তাদের এই প্যাকেজের মূল্য শুরু ১১ হাজার ৯৯৯ টাকা থেকে। প্যাকেজটির আওতায় গ্রাহকেরা বুফেতে সকালের নাশতা ও এক ঘণ্টার জন্য পুল-সুবিধা পাবেন। এ ক্ষেত্রে ৫ বছরের কম বয়সী একজন শিশু ফ্রি থাকতে পারবে।
কুয়াকাটার সিকদার রিসোর্টও ৬০ শতাংশ ছাড়ে বিভিন্ন মানের রুম বুকিং নিচ্ছে। ছাড়ের পর তাদের ডিলাক্স রুমের ভাড়া পড়ছে ৫ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ভাড়া রয়্যাল স্যুটের, ২২ হাজার ৭০০ টাকা। বুকিংয়ের পর তিন মাস পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে।
এ ছাড়া গ্র্যান্ড সিলেট, বেস্ট ওয়েস্টার্নসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার হোটেল ও রিসোর্টগুলো ছাড় দিচ্ছে।