একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে, উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা অনিশ্চয়তার মুখে

ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচির শুরুতে আজ রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জের শিবু মার্কেট এলাকার তৈরি পোশাক কারখানায় হামলা হয়। তখন ওই এলাকার কারখানাগুলোয় ছুটির সিদ্ধান্ত দেয় কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতির অবনতি হলে নারায়ণগঞ্জ বিসিকের সব পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেন মালিকেরা। একইভাবে গাজীপুরেও অনেক পোশাক কারখানা উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকদের ছুটি দিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকার ফতুল্লা অ্যাপারেলস অন্যদিনের মতো আজ সকালে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করে। তবে সকাল ১০টার দিকে কারখানার বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ফজলে শামীম এহসান আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সংকট আরও বেড়ে গেছে। স্বাভাবিক উৎপাদন চালানো এখন অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে।

ফজলে শামীম এহসান আরও বলেন, অন্যান্য দিনের মতো আজ সকালেও কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছিল। শ্রমিকেরাও কাজে এসেছিলেন। হঠাৎ শিবু মার্কেট এলাকার তিনটি কারখানায় হামলা হয়। এরপর শ্রমিকেরা বের হয়ে আসেন। তাঁদের অনেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পোস্ট অফিসের দিকে যান। তখন সেখানকার কারখানাগুলো ছুটি দিয়ে দেয়। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলে বিসিকের সব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের এই উদ্যোক্তা বলেন, বিসিক ও শিবু মার্কেট এলাকার কারখানাগুলোয় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক কাজ করেন। যখন কারখানাগুলো ছুটি দেওয়া হচ্ছে, তখন তাঁদের বড় অংশই বাসা বা মেসে চলে যাচ্ছেন। তবে তাঁদের একটি অংশ আবার রাজপথে থেকে যাচ্ছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত মাসের মাঝামাঝি থেকে সংঘাত শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। সে সময় সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক ও বন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। গত ২৩ জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে শিল্পকারখানা চালু হয়।

ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘কারফিউর কারণে আমাদের কারখানাগুলো পাঁচ থেকে ছয় দিন বন্ধ ছিল। তার পর থেকে কারখানার উৎপাদন ঠিকঠাকভাবে চলছিল। তবে আজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে, তাতে কাল থেকে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন করা যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।’

জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে ইন্টারনেট, কারখানা ও বন্দর বন্ধ থাকায় তৈরি পোশাক খাতের বেশ কিছু কোম্পানিকে নিজস্ব খরচে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে পাঠাতে না পারায় অনেক কোম্পানিতে বাড়তি সময় দিচ্ছে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আবার মূল্যছাড়ও দাবি করছে। এমনকি নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতারা কিছুটা ধীরে চলো নীতি নিয়েছে, এমনটাই জানিয়েছে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।

বর্তমান অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে ক্রয়াদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নেবেন কি না—এমন প্রশ্নে ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘অনিশ্চয়তা বাড়লে অবশ্যই ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে রাতারাতি ক্রয়াদেশ অন্য দেশে স্থানান্তর হয়ে যাবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা এখনো মনে করি, আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সমস্যার সমাধান সম্ভব। ক্রেতারা অন্য দেশে ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করবেন—এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগেই একটা ফয়সালা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’