ঝিনাইদহ চেম্বারের নতুন কমিটির দায়িত্ব নেওয়া নিয়ে জটিলতা

ঝিনাইদহ চেম্বারের সভাপতি সাইদুল করিম (মিন্টু)

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম (মিন্টু) গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঝিনাইদহ চেম্বারের নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে জটিলতা শুরু হয়েছে। কারণ তিনি চেম্বারের নবনির্বাচিত সভাপতি। সভাপতি গ্রেপ্তার হওয়ার পর চেম্বারের নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে—এমন অভিযোগ করেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল। এই প্যানেলের নেতারা আবার ভোটের দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

১৯৮৫ সালে ঝিনাইদহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচনে ১ জুন ভোট হয়। এতে ১৯টি পদের বিপরীতে দুটি প্যানেলের ৩৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি সাইদুল করিম। ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ নামে অন্য প্যানেলের নেতৃত্ব দেন আরেক সাবেক সভাপতি খোন্দকার সাখাওয়াৎ হোসেন। নির্বাচনে ভোটার হন প্রায় ৩৫০ ব্যবসায়ী।

২০২৪-২৬ সাল মেয়াদে ঝিনাইদহ চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের ১৮ জন প্রার্থী জয়ী হন। পরে ওই প্যানেলের সাইদুল করিম সভাপতি, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও মো. বকুল বাশার কনিষ্ঠ সহসভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হোন। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটি তদারকির দায়িত্বে ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ দেওয়া প্রশাসক।

২০২২ সালের ৩১ জুলাই থেকে ঝিনাইদহ চেম্বারের প্রশাসক পদে দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রথীন্দ্র নাথ রায়। এর আগের ছয় বছর চেম্বারের সভাপতি পদে ছিলেন সাইদুল করিম। তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটির কাছ থেকে দায়িত্ব নেন প্রশাসক।

গত ১২ মে কলকাতায় গিয়ে পরদিন নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা চেম্বারের নতুন সভাপতি সাইদুল করিমকে ১১ জুন রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ঈদের ছুটির পর ১৯ জুন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের পক্ষে চেম্বারের সদস্য খোন্দকার হাফিজুর রহমান ফারুক নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এতে তিনি পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, বিধিবিধান না মেনেই স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রধান নির্বাহীকে চেম্বারের ট্রেড গ্রুপের সদস্য করা হয়েছে। তা ছাড়া ট্রেড গ্রুপ থেকে দুজন কার্যনির্বাহী পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়েছে, যা বিধিবহির্ভূত। এ ছাড়া ২০২২ সালে তৎকালীন কমিটির অনিয়মের কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রশাসক নিয়োগ করে। ফলে সেই কমিটির সদস্যরা ছয় বছর বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্য নন। অথচ অভিযুক্তরা নির্বাচন করেছেন। এ ছাড়া ভোট গ্রহণেও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। ২৪ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই আবেদন গ্রহণ করে।

এক দিন পর অর্থাৎ ২৫ জুন চেম্বারের প্রশাসক রথীন্দ্র নাথ রায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের মহাপরিচালকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চান, নবনির্বাচিত সভাপতি গ্রেপ্তার হওয়ার পর নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়ে তাঁর করণীয় কী। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ২২ জুন তাঁর মেয়াদ শেষ হয়েছে।

রথীন্দ্র নাথ রায় গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পাওয়ার পর দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।’ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন কাউকে সদস্যপদ দিইনি। শুধু ভোটার তালিকা করেছি। সেই তালিকা নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তা ভোটের আগে যথা সময়ে জানানো উচিত ছিল। তাহলে নির্বাচনের আপিল বোর্ড সেটি খতিয়ে দেখত।’

নির্বাচনের পর অনিয়মের অভিযোগ করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘সাইদুল করিম প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফলে অভিযোগ করাটা আমাদের জন্য সহজ ছিল না। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলেছে।’ মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, চেম্বারের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি অর্ডিনারি গ্রুপ থেকে হলে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অ্যাসোসিয়েট গ্রুপ থেকে হওয়ার কথা; কিন্তু সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি উভয়েই অর্ডিনারি গ্রুপ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এটাও একটা অনিয়ম।

অবশ্য নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চেম্বারের জন্মলগ্ন থেকে কখনো ভোট হয়নি। ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নেতারা সব সময় চেম্বারকে কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা করেছেন। এবার প্রথম সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। তাঁদের ভোটাররা পছন্দ করেননি। তাই তাঁরা হেরেছেন। নতুন সভাপতি বেকায়দায় পড়েছেন বলে তাঁরা (ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নেতারা) সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সময়ের মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করব।’