বন্যা-খরায় সবজির দাম বাড়তি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা

  • কোরবানির কারণে মাংসের চাহিদা কম থাকায় কিছুটা কমেছে মুরগির দাম।

  • প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়।

বাজারফাইল ছবি

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খুচরায় এক কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর এই বাজার থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত তেজগাঁওয়ের পশ্চিম তেজতুরী বাজারে প্রতি কেজি বরবটির দাম ১২০ টাকা।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ঈদুল আজহার আগে রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি বরবটির দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা। এখন দাম দ্বিগুণ। বাজারে বরবটি কম, তাই দাম বেশি। বরবটি বেশি আসে সিলেট অঞ্চল থেকে। ওই অঞ্চলে বন্যা ও বৃষ্টির প্রভাবে সরবরাহ কমে যাওয়ায় তার প্রভাব
পড়েছে দামে।

বরবটির মতো বেগুন, করলা, গাজর, টমেটো, শসা, আলু, কচুর মুখি, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচের দামও বাড়তি। ডিমের দাম কিছুটা কমলেও এখনো বাড়তি। আর মুরগির দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কাঁঠালবাগান ও পশ্চিম তেজতুরী বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খরা, বন্যা, বৃষ্টির কারণে এখন অধিকাংশ সবজির দাম বাড়তি। 

বিক্রেতা বলছেন, বাজারে সবজির সরবরাহ কম। দাম বেশি হওয়ায় সবজি কিনতে গিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে কথা-কাটাকাটির ঘটনাও ঘটছে ক্রেতাদের।

বাজারভেদেও আবার সবজির দাম কমবেশি রয়েছে। যেমন কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি বেগুন খুচরায় বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। কাঁঠালবাগানে সেই দাম ৮০ টাকা এবং তেজতুরী বাজারে এক দোকানে দাম ১০০ টাকা, অন্য আরেকটিতে ৮০ টাকা।

সরেজমিনে উল্লেখিত বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার ও মানভেদে করলা প্রতি কেজি ৬০ থেকে ১২০ টাকা, গাজর ৮০ থেকে ১২০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, শসা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, আলু ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, কচুর মুখি ৮০ টাকা কেজি ও ডিম প্রতি হালি ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, ধুন্দুল, কাঁকরোল, লতি ও পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুম না থাকায় এখন শসা, বেগুন, টমেটোর দাম বাড়তি। কাঁচা মরিচের এখন মৌসুম হলেও খরায় অনেক এলাকায় গাছ মরে গেছে, সে জন্য উৎপাদন কম। দেশি গাজরের মৌসুম শেষের পথে। আলু ও পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। আবার বাজারে সরবরাহেও ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে দাম বাড়তি।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৬০ থেকে ৭৮০ টাকা, খাসি প্রতি কেজি এক হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ২০০ টাকা এবং কক মুরগি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, মানুষের ঘরে কোরবানির মাংস থাকায় ঈদের পর মুরগির চাহিদা কিছুটা কম। এ কারণে আগের সপ্তাহের চেয়ে দামও কিছুটা কমেছে।

এদিকে বাজারে বেশির ভাগ সবজির দাম বাড়তি থাকায় বাজার করতে গিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভও দেখা যাচ্ছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম নিয়ে কারও কারও কথা-কাটাকাটির ঘটনাও দেখা গেছে সরেজমিনে একাধিক বাজার ঘুরে।

কারওয়ান বাজারে গতকাল দুপুরে একটি দোকানে ২০ টাকার কাঁচা মরিচ চান বেসরকারি চাকরিজীবী রাকিবা আক্তার। কিন্তু ২০ টাকার মরিচ বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানান বিক্রেতা। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ওই বিক্রেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘পাইকারিতে মরিচের দাম বাড়তি। এত অল্প টাকার মরিচ বিক্রি করলে আমাদের পোষায় না। এ জন্য আড়াই শ গ্রামের নিচে মরিচ বিক্রি করি না।’

পরে অবশ্য আরেক দোকান থেকে ২০ টাকায় কাঁচা মরিচ কেনেন রাকিবা আক্তার। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সবার সামর্থ্য ও প্রয়োজন এক না–ও হতে পারে। তাই যার যতটুকু প্রয়োজন, সেটুকু বিক্রি করা উচিত।

দাম বাড়তি থাকায় বিক্রিও কম হচ্ছে সবজি। পশ্চিম তেজতুরী বাজারের সবজি বিক্রেতা হুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই না কিনে চলে যাচ্ছেন। এতে বিক্রি কম হচ্ছে। তাই আমিও যেসব সবজির দাম বেশি, সেগুলো কম আনছি।’

কাঁঠালবাগান বাজার থেকে ৭০ টাকায় এক কেজি আলু, ৩৫ টাকায় আড়াই শ গ্রাম টমেটো, ৬০ টাকায় এক কেজি পেঁপেসহ বেশ কিছু পণ্য কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী তানভীর সিদ্দিকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। মানুষ ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারছেন না। এত দাম দিয়ে নিত্যপণ্য কেনা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য কঠিন হয়ে গেছে।