একটুখানি প্রতারিত প্রেমিকের মতো মনে হয়েছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের একটুখানি প্রতারিত প্রেমিকের মতো হয়েছে। আমরা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করি, কিন্তু ডব্লিউটিও আমাদের তা দিতে পারেনি।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘ডব্লিউটিওতে দর-কষাকষি বা আলোচনা করে বাজারসুবিধা পাওয়া যাবে, আমি একটু দুর্বল বলে সব সুবিধা পাব, কিন্তু আমি কিছু দেব না—এটা বেশ পুরোনো ধাঁচের বাণিজ্য আলোচনা, এর জন্য ডব্লিউটিও সৃষ্টি হয়নি।’
আজ রোববার স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণে পরবর্তী করণীয় নিয়ে সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সংলাপ আয়োজন করে সিপিডি। এতে সহায়তা করে ফেডরিক এভার্ট স্টিফটাং (এফইএস)। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। এতে রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও আমলারা বক্তব্য দেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর এলডিসি উত্তরণের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো ডব্লিউটিওর দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে স্বীকৃতি পেয়েছে, কিন্তু সেগুলোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি আরও বলেন, পশ্চাৎপদ চিন্তা বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎমুখী চিন্তা করতে হবে। রাজনীতিবিদ ও পেশাদারদের ভাষ্যের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। এ বিষয়ে একটি উদাহরণ দেন তিনি। বলেন, ‘ডব্লিউটিওর এক সভায় মন্ত্রী বলেছেন, আমরা অনেক অর্থনৈতিক উন্নতি করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হয়ে যাব। আবার যাঁরা কারিগরি বিষয়ে দর-কষাকষি করেন, তাঁরা একই সভায় বলছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বাজারসুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে। তখন বিদেশিরা আমাকে বলেন, তোমাদের কোনটি ঠিক?’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ, তা ধরেই ভবিষ্যৎ সব পরিকল্পনা করতে হবে। এলডিসি উত্তরণের পর দ্বিপক্ষীয় আঞ্চলিক বাণিজ্যসুবিধা পাওয়ায় বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, এলডিসি উত্তরণ হলে রপ্তানি খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহব্যবস্থায় প্রভাব পড়েছে, মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান, ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ও বাণিজ্যবিশেষজ্ঞ মোস্তফা আবিদ খান, এফইএসের আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কোলবিৎজ প্রমুখ।