সিএজির ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা, কার্যালয় ভাঙচুর

বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে হামলাকারীরা। গতকাল রাজধানীর কাকরাইলের অডিট ভবন তথা সিএজি কার্যালয়ের সামনেছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মো. নুরুল ইসলামের ওপর হামলা হয়েছে। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয়েছে তাঁর কার্যালয়। ভেঙে দেওয়া হয় সিসিটিভি। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত এ হামলা চালায়।

সিএজি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারীরা সংখ্যায় ১০০ জনের বেশি ছিল। হামলাকালে তারা দাবি করে, সিএজি নুরুল ইসলামকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল লোক সিএজির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত অডিট ভবনে প্রবেশ করে। তারা সিএজি কার্যালয়ের দরজায় লাথি মারে এবং দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। তখন তাদের প্রতিহত করেন সিএজি কার্যালয়ের কর্মচারীরা। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। সেনাসদস্যদের প্রহরায় দুপুর ১২টার দিকে সিএজি নুরুল ইসলাম অফিস ত্যাগ করেন।

গতকাল বুধবার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি লিফলেট বিলি হয়। এতে লেখা রয়েছে, সেগুনবাগিচা হিসাব ভবন (এজি অফিস) চত্বরে সেবাপ্রার্থীদের বসার জায়গা সংকুচিত করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনসহ সিএজির আওতাধীন সব কার্যালয়ে মুজিব কর্নার তৈরি করেছেন তিনি।

জানতে চাইলে সিএজি নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। আর এক বছরে সহজে পেনশন দেওয়াসহ অনেক দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এতে অনেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন।

সিএজি একটি সাংবিধানিক পদ। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১২৭(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. নুরুল ইসলামকে নিয়োগ দেন ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই। তিনি অষ্টম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং ১৯৮৯ সালে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারের মাধ্যমে চাকরিজীবন শুরু করেন।

সিএজি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সময়ও একটি দল নুরুল ইসলামের বিরোধিতা করেছিল এই বলে যে তাঁর গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি। এখন আরেকটি দল বিরোধিতা করে বলছে, তিনি বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের আস্থাভাজন। জানা গেছে, হামলাকারীদের মধ্যে কেউই সিএজি কার্যালয় বা এর আওতাভুক্ত কোনো নিরীক্ষা অধিদপ্তরের কেউ ছিলেন না। প্রশ্ন হচ্ছে, হামলাকারীরা তাহলে কারা?

সূত্রগুলো জানায়, ভবিষ্যতে সিএজি হতে চান—এমন কেউ ভাড়াটে লোক দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনাকে ব্যবহার করেছেন। ঘটনার পর সিএজি নুরুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন সমন্বয়কের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে জেনেছেন, এ হামলায় কোনো ছাত্র ছিলেন না। তাঁরা হামলার বিরুদ্ধে পুলিশে নালিশ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

রমনা থানা থেকে ঘটনাস্থল অডিট ভবনের দূরত্ব আনুমানিক ২০০ গজ। রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া প্রথম আলোকে জানান, তিনি আজ রাত ৯টা পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাননি।

সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জানতে চাইলে সাবেক সিএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি, তা অনভিপ্রেত এবং সুশাসনের প্রতি অন্তরায়। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’