ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রকে জাতীয় ঋণের সীমা বাড়াতে হবে। নতুন ঋণ করতে হবে আগের ঋণ পরিশোধে। কিন্তু জাতীয় ঋণসীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ঋণের সীমা বাড়ানো নিয়ে দ্বিমত রয়েছে কংগ্রেসের।
এই বাস্তবতায় মার্কিন অর্থমন্ত্রী জানেট ইয়েলেন বলেন, ঋণের সীমা বাড়ানো না গেলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। দেশটির জাতীয় ঋণ এখন ৩০ লাখ কোটি ডলারের বেশি।
ঋণের সীমা বাড়ানো না গেলে জুনের প্রথম দিকেই ফেডারেল সরকারের পক্ষে মজুরি, কল্যাণ ভাতাসহ অন্যান্য অর্থ পরিশোধ করার মতো সক্ষমতা থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের সীমা বাড়ানো কংগ্রেসের কাজ। যদি তারা ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, তা আমাদের কারণেই হবে।’
গতকাল রোববার এবিসি নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইয়েলেন বলেন, মার্কিন জনগণের মাথায় বন্দুক ধরে ঋণের সীমা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা উচিত হবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, সময় ফুরিয়ে আসছে।
বিবিসির এক সংবাদে বলা হয়েছে, আগামীকাল মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রিপাবলিকান নেতাদের সঙ্গে জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করবেন। বর্তমানে দেশটির জাতীয় ঋণের সীমা ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন বা ৩১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার।
এদিকে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে ঋণের সীমা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিল পাস করেছে। কিন্তু এর সঙ্গে শর্ত দেওয়া হয়েছে, আগামী এক দশকে সরকারের ব্যয় অনেকটাই হ্রাস করতে হবে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চান, কংগ্রেস বিনা শর্তে ঋণের সীমা বৃদ্ধি করুক। তিনি বলেন, ঋণের সীমা বৃদ্ধির বিষয়ে আপস বা শর্ত দেওয়া যাবে না। এই বিষয় সুরাহা হওয়ার পরই কেবল বাজেট হ্রাসের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
জানেট ইয়েলেন বলেন, ঋণের সীমা বৃদ্ধির বিষয়ে আন্তদলীয় ঐকমত্য না হলে দেশটিতে সাংবিধানিক সংকট হতে পারে। ১৯৬০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঋণের সীমা ৭৮ বার বর্ধিত বা সংশোধন করা হয়েছে।
কেন এত ঋণ
বিশ্বের প্রবল শক্তিধর রাষ্ট্রের রেকর্ড ঋণের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৮ সাল থেকেই ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল। তারপর ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে কোভিড মহামারি। মহামারি নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে বেশ কয়েকবার নাগরিকদের প্রণোদনা দিয়েছে ট্রাম্প ও বাইডেন সরকার।
সিএনএনের তথ্যানুসারে, ২০০৭ সালে মন্দা শুরুর সময় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ছিল ৯ লাখ কোটি ডলারের বেশি। সেটা বাড়তে বাড়তে ২০ লাখ কোটিতে পৌঁছায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে। এই ঋণের বোঝা বেড়েছে করোনাকালে। জো বাইডেনের আমলে সব মিলিয়ে ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ কোটি ডলারের বেশি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আশার কথা হলো, ২০২১ সালে তারা সুদ পরিশোধ করেছে মোট জাতীয় উৎপাদনের ১ দশমিক ৫ শতাংশ। ১৯৯০-এর দশকে এই হার ছিল ৩ শতাংশ। অর্থাৎ সুদ পরিশোধের হার কমেছে।