দেশের অর্থনীতি এখনো পিছলে পড়েনি: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ থাকলেও দেশের অর্থনীতি এখন পর্যন্ত সঠিক পথে চলছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে আমি সংকট না বলে অস্বস্তিতে আছি বলব। এই অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যেও আমরা ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।’
দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘অনেকে বলছেন, বেইল আউটের জন্য আমাদের আইএমএফের কাছে যেতে হচ্ছে। আমরা শ্রীলঙ্কা হতে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিকভাবেও কেউ কেউ বাংলাদেশকে নানাভাবে সতর্ক করছেন। যেহেতু নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, সে জন্য দেশি–বিদেশি যৌথ একটা প্রয়াস চলছে। কিন্তু আমাদের ফাঁদে পা দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, দেশের অর্থনীতি এখনো পিছলে পড়েনি।’
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সেমিনারে অর্থনীতি নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির প্রয়াস বন্ধ করার আহ্বান জানান শামসুল আলম। তিনি বলেন, ১৯৭৪–৭৫ সালে হক কথা পত্রিকা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। তারা একেক দিন মিথ্যার ঝুড়ি নিয়ে আসত। সেই হক কথার ভূমিকা যেন কেউ আর না নিতে পারে, সে জন্য গণমাধ্যমকে সহনশীল আচরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।
তবে মূল্যস্ফীতিকে দেশের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সরকারের এই প্রতিমন্ত্রী। শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিকভাবে একটা স্বাচ্ছন্দ্যকর অবস্থায় আছি, এটা ঠিক। কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি, এটাও সত্য। আমরা খুব উদ্বিগ্ন, সেই কারণেই সরকার টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে খাদ্য দিচ্ছে।’
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর আমাদের রপ্তানি আয় প্রায় ৫৭৩ কোটি মার্কিন ডলার কমে যেতে পারে।’ সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যমান শুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূর করার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বা সেপা চুক্তি করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের ঋণ গ্রহণের চাহিদা বাড়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমেছে বলে জানান রিজওয়ান রাহমান।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অস্বস্তিকর অবস্থাকে সাময়িক বলে মনে করেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকার বিষয়গুলোকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে। এ ছাড়া দেশের জ্বালানিসংকট কাটাতে অফশোর গ্যাসকূপ অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান শফিউল ইসলাম। এ জন্য বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান জানান, ভারত ও চীনের মতো বেশ কিছু দেশের সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গ্যাসের চাপ কম থাকায় শিল্পকারখানায় পণ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানান বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় ব্যবসার খরচ বাড়বে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের দাবি জানান তিনি।