মেট্রোরেলের টিকিটে জুলাই থেকে ভ্যাট বসাতে চায় এনবিআর
এ বছরের জুলাই মাস থেকে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপ করা হতে পারে। মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর বর্তমানে ভ্যাট মওকুফ রয়েছে, যার সময়সীমা আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই মওকুফ সুবিধা আর অব্যাহত রাখতে আগ্রহী নয়। কারণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে সব ধরনের করছাড় কমাতে হবে।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট বসানো নিয়ে এখন এনবিআরের নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনা চলছে।
বর্তমান ভ্যাট আইন অনুযায়ী, যেকোনো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিধান আছে। মেট্রোরেল পুরোপুরি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং গণপরিবহন। মেট্রেরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট আরোপের জন্য এনবিআর গত বছরের গোড়ার দিকে একবার মেট্রোরেল কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছিল।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যাট আরোপ নিয়ে এনবিআর ও মেট্রোরেল কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে নতুন করে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব আবারও দেওয়া হয়। কিন্তু মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তখন সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
পরে মেট্রোরেলে কর্তৃপক্ষ টিকিটের ওপর ভ্যাট না বসানোর যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে চিঠি দেয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কোম্পানি সচিব ও পরিচালক আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেল টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের আইন আছে। কিন্তু ওই সব ট্রেনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত শ্রেণি ছাড়াও সাধারণ শ্রেণি আছে। টিকিটধারী যাত্রীদের ‘শ্রেণি’ পছন্দ করার সুযোগ আছে। কিন্তু মেট্রোরেলে পুরোটাই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। সেখানে সব যাত্রীদের একই টিকিট কাটতে হয়। এ ছাড়া মেট্রোরেল এখন পুরোপুরি গণপরিবহন, যেখানে সাধারণ মানুষ ভ্রমণ করে।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, ঈদের পর বিষয়টি নিয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবার বৈঠক হবে। ভ্যাট বিভাগের ওপর কর আদায় বাড়ানোর চাপ আছে। বর্তমানে বিভিন্ন খাতে যে করছাড় দেওয়া হয়, তা কমানোর জন্যও চাপ আছে।
এনবিআরের এক বছরের চেষ্টা
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। গত বছর থেকে পুরোদমে মতিঝিল পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল। বর্তমানে প্রতিদিন কমবেশি আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহন করে এই নগর পরিবহনব্যবস্থা।
২০২৩ সালের শুরু থেকেই মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেয় এনবিআর। ওই বছরের ২২ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদী ভ্যাট আরোপের আহ্বান জানিয়ে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (মেট্রোরেল কোম্পানি) চিঠি দেন। পরে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়। তবে ভ্যাট আরোপ থেকে এনবিআর শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসে।
২০২৩ সালের মে মাসে এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে যে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট মওকুফ থাকবে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট বসানো উচিত হবে না। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এমন কর আরোপ করা ঠিক হবে না। টিকিটের ওপর ভ্যাট বসালে টিকিটের দাম বাড়তে পারে। যাত্রীরা সেটা বহন করতে পারবে কি না, তা বিবেচনায় আনতে হবে।