চামড়াশিল্প
সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না
২০৩০ সালের মধ্যে হাজার কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা উন্নত কর্মপরিবেশের অভাব।
সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্পগুলো দীর্ঘদিন ধরেই দূষণের দোষে ভুগছে। দূষণ বন্ধ করতে না পারায় ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। সেই আক্ষেপই আবার করলেন দেশের চামড়া খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। বললেন, ‘আমরা নিজস্ব কারখানার চামড়া রপ্তানি করতে পারছি না।’
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘করোনা ও যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে যাচ্ছে। এ রকম সময়ে চামড়াপণ্যের বাজারে আমাদের হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ ছিল। নিজস্ব কাঁচামাল থাকার পরও শুধু উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) অভাবে সে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’
‘ট্যানারিশিল্পে করোনার প্রভাব মূল্যায়ন’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। গতকাল মঙ্গলবার অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) যৌথভাবে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ট্যানারিগুলো আর্থিক সংকটে ভুগছে। সে জন্য দ্রুততম সময়ে হাজারীবাগকে রেড জোনের আওতামুক্ত করা দরকার। সেটি হলে ট্যানারিগুলো সেখানকার সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ এবং ব্যবসায়ে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে। তিনি বলেন, অভিজ্ঞ একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান চামড়াশিল্প নগরের বর্তমান কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) কার্যকর করার ব্যাপারে কারিগরি সহায়তা দিতে চায়। সে জন্য তাদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু সহযোগিতা দিতে হবে।
এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়ে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি বলেন, সিইটিপিতে যে অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে, সেটি জনগণের টাকা। ফলে এটি ফেলে দেওয়া যাবে না। চামড়া খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারের সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে।
শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘সিইটিপির বর্জ্য পরিশোধনব্যবস্থা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে ভালো। একটি সূচক ছাড়া বাকি সব কটিই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আছে। আমরা শুধু কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যার মধ্যে রয়েছি।’ এ ছাড়া রাজশাহীতে চামড়া খাতের জন্য সিইটিপি প্ল্যান্ট বসানোর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ওয়েবিনারে এক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, কমপ্লায়েন্স না হওয়ায় বাংলাদেশ চামড়াপণ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দাম কম পাচ্ছে। তিনি বলেন, চামড়া খাতের সমস্যা আগে থেকে চিহ্নিত। এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং উন্মুক্ত জায়গায় ময়লা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ও দক্ষ উদ্যোগ দরকার।
এম আবু ইউসুফ আরও বলেন, চামড়া খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আট হাজার কোটি টাকার ব্যাংকঋণ আছে। এই ঋণের বিপরীতে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়। অনেক কারখানাই সময়মতো ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি। তাই এসব কারখানা করোনাকালে প্রণোদনা সুবিধা পায়নি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগোলে এ খাতের রপ্তানি আয় ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব। চামড়া খাতের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।
ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী সাখাওয়াৎ হোসেন, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন, এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।