মন্দা বাজারে কী করবেন, কী করবেন না
শেয়ারবাজারে এখন মন্দাভাব চলছে। বাজারে যাঁদের বিনিয়োগ আছে, তাঁরা যেমন মন্দা বাজারে নিজের বিনিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, তেমনি নতুন করে যাঁরা বিনিয়োগে আগ্রহী, তাঁরাও আছেন দোটানায়। এমন বাজারে কী করা উচিত বিনিয়োগকারীদের? সেই পরামর্শ দিয়েছেন সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান এড্জ এএমসির চেয়ারম্যান আসিফ খান। তাঁর রয়েছে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ পরামর্শক হিসেবে কাজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। অনুলিখন করেছেন সুজয় মহাজন।
সাধারণভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুটি প্রচলিত স্টাইল বা ধরন রয়েছে। তার একটি মৌলভিত্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিনিয়োগ, অন্যটি কারিগরি বিশ্লেষণ বা টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের ভিত্তিতে বিনিয়োগ। প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তি শ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই কোনো না কোনো ধরন মেনে চলতে হয়। যাঁরা টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস মেনে চলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসই বলে দেয়, কখন শেয়ার কিনতে হবে বা বিক্রি করতে হবে। কিন্তু মৌলভিত্তি পর্যালোচনা করে যাঁরা বিনিয়োগ করেন, তাঁদের ভরসা করতে হয় নিজস্ব বিশ্লেষণ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, কোম্পানির ভালো-মন্দ এবং বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির নানা নিয়ামকের ওপর।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশের বেশির ভাগ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম বা স্টাইল অনুসরণ করেন না। এ কারণে বাজারের উত্থান-পতনে তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। বাজার পড়ে গেলে তাঁরা বেশি আতঙ্কিত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ আতঙ্ক বা দুশ্চিন্তা দূর করতে হলে বিনিয়োগকারীদের কিছু প্রচলিত স্টাইল বা ধরন অনুসরণ করা দরকার। বিশেষ করে মৌলভিত্তির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মন্দা বাজারে বিনিয়োগকারীদের করণীয় বিষয়ে এখানে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
যাঁরা সামর্থ্যের পুরোটা বিনিয়োগ না করে অর্ধেক বিনিয়োগ করেছেন, বাজার পড়তে শুরু করলে তাতে তাঁদের তাৎক্ষণিকভাবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীরা যখন শেয়ার বিক্রি করে দেন, তখন তাঁরা সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন। এতে শেয়ারের ক্রয়মূল্য কমে আসে এবং মুনাফার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
হঠাৎ যখন বাজারে দরপতন ঘটে, তখন আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে উচিত দরপতনের সঠিক কারণ খতিয়ে দেখা। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে যে দরপতন শুরু হয়েছে, এর পেছনে বড় ভূমিকা ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এখন আপনার দেখার বিষয়, এ যুদ্ধের ফলে আপনার বিনিয়োগ করা কোম্পানির ব্যবসা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না। যদি দেখা যায়, কোম্পানির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত হবে একরকম। আর যদি দেখা যায়, যুদ্ধের প্রভাবে আপনার বিনিয়োগ করা কোম্পানির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই, তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত হবে আরেকরকম। তবে যখন বাজার খারাপ থাকে, তখন সব ধরনের শেয়ারেরই দাম কমতে দেখা যায়। তাই আপনার বিনিয়োগ যদি ভালো কোম্পানিতে হয় এবং সেই কোম্পানির ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ভালো থাকে, তাহলে মন্দা বাজারে শেয়ার বিক্রি না করে উল্টো দাম কমে গেলে ওই শেয়ারে আরও বিনিয়োগ করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, নতুন করে আরও বিনিয়োগের সক্ষমতা রয়েছে কি না। যদি কেউ বিনিয়োগ সক্ষমতার পুরোটা বিনিয়োগ করে ফেলেন, তাহলে তাঁর উচিত বাজারে মন্দাভাব শুরুর প্রথম দিকে কিছু শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতে রেখে দেওয়া। তবে মন্দাভাবের শেষ দিকে এসে শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে তাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
আবার যাঁরা সামর্থ্যের পুরোটা বিনিয়োগ না করে অর্ধেক বিনিয়োগ করেছেন, বাজার পড়তে শুরু করলে তাতে তাঁদের তাৎক্ষণিকভাবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীরা যখন শেয়ার বিক্রি করে দেন, তখন তাঁরা সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন। এতে শেয়ারের ক্রয়মূল্য কমে আসে এবং মুনাফার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পড়তি বাজারে কখন শেয়ার কিনবেন তার জন্যও প্রচলিত কিছু নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে। ধরা যাক, ‘এ’ নামের একটি কোম্পানির শেয়ারের কথা। ‘এ’ কোম্পানির শেয়ার গত কয়েক বছরে ১০ থেকে ২০ পিই রেশিওতে (মূল্য আয় অনুপাত) লেনদেন হয়। যদি দেখেন দরপতনের ফলে ‘এ’ কোম্পানির শেয়ারের পিই রেশিও সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে, তখন ওই শেয়ারের বিনিয়োগ করতে পারেন। আবার যদি দেখা যায়, একই খাতের তালিকাভুক্ত অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে বেশ কম পিইতে রয়েছে ‘এ’ কোম্পানির শেয়ার। তাহলেও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আবার মন্দা বাজারে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে লেনদেনও একটি বিবেচ্য বিষয়। যদি দেখা যায়, লেনদেন ঊর্ধ্বমুখী, তাহলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
শেয়ারবাজারে ওঠানামা থাকবেই, এটাই সাধারণ নিয়ম। এ ওঠানামার মধ্যেই বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সেই সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করবে লাভ-লোকসান। তবে তার জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগের নিজস্ব একটি স্টাইল বা ধরন তৈরি ও তা অনুসরণ করা।