২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক পণ্যের প্রকৃত মূল্য কমবে: প্রজ্ঞা

প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক পণ্যের ব্যবহার বাড়বে। সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়বে এবং অতিরিক্ত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় কথাগুলো বলেছে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা। তারা বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকবিরোধীদের কোনো দাবি আমলে নেওয়া হয়নি এবং এটি প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আজ বৃহস্পতিবার বাজেট পেশ করার পরপরই গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তিতে বাজেটের মূল্যায়ন করে প্রজ্ঞা। সংগঠনটির কথা, প্রস্তাবিত বাজেটে কম দামের ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য মাত্র ১ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট কার্যকর হলে এই স্তরে সিগারেটের দাম বাড়বে মাত্র ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা ১০ শতাংশ মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির তুলনায় খুবই সামান্য। ফলে এই স্তরের সিগারেটের প্রকৃত মূল্য ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে এবং তরুণ ও নিম্ন আয়ের জনগণের মধ্যে কম দামি সিগারেটের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বাড়বে।

প্রজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশই নিম্ন স্তরের দখলে, যার প্রধান ভোক্তা মূলত দরিদ্র ও তরুণ জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে কেবল খুচরা মূল্য ১ টাকা বাড়ানোর কারণে বর্ধিত মূল্যের একটা অংশ কোম্পানির পকেটে চলে যাবে। তবে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হলে সরকারের রাজস্ব আয় বহগুণ বাড়বে এবং কম দামি সিগারেটের ব্যবহার কমবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৬৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা (৩.১৭ শতাংশ), উচ্চ স্তরে ১০২ টাকা থেকে ১১১ টাকা (৮.৮২ শতাংশ) এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৩৫ টাকা থেকে ১৪২ (৫.১৮ শতাংশ) টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির (১০ শতাংশ) তুলনায় মূল্যবৃদ্ধি কম হওয়ায় সব ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্রকৃতমূল্য কমবে অর্থাৎ আরও সস্তা হয়ে পড়বে। জনগণ সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।

প্রজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিড়ি, জর্দা ও গুলের দাম এবং করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় যা অত্যন্ত হতাশাজনক। বিড়ির প্রধান ভোক্তা নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষ। এ ছাড়া তামাক ব্যবহারকারীদের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন, যাঁদের অধিকাংশই দরিদ্র এবং নারী। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে এসব পণ্য ব্যাপকভাবে সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে যাবে। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষত নারীরা ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত হবে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়ে যাবে।

প্রতিবছর বাজেটের আগে বিড়ি কোম্পানির মালিকেরা তাঁদের শ্রমিকদের দিয়ে বিড়ির কর বৃদ্ধি ঠেকানোর আন্দোলন করে থাকেন এবং বাজেটে তারই প্রতিফলন দেখা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনস্বাস্থ্য, সরকার বঞ্চিত হয় বর্ধিত রাজস্ব থেকে।

বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। টোব্যাকো অ্যাটলাস, ২০১৯–এর তথ্য অনুযায়ী, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।