স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গর্ব করার মতো বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলেছেন, ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্যম আয়ের কাতারে উঠে এসেছে। স্বল্পোন্নত আয়ের দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। এ ক্ষেত্রে শ্রমজীবীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তাঁরাই উন্নয়নের প্রকৃত নায়ক। কিন্তু তাঁরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারের উচিত, এখন বৈষম্য নিরসনে জোর দেওয়া।
বাংলাদেশের এই অর্জনের তিনটি মূল স্তম্ভ হচ্ছে (১) কৃষিতে উচ্চফলনশীল ধান (২) শ্রমনিবিড় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প ও (৩) বিদেশে কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স। ১৯৮০-৮১ সাল থেকে ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত ধান উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুণ।
ধানের উৎপাদনে উফশীর বা উচ্চফলনশীল ধানের হিস্যা এক–পঞ্চমাংশ থেকে ৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিআইডিএস) এক বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদেরা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা: সুবর্ণজয়ন্তীতে ফিরে দেখা’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদেরা উপস্থিত ছিলেন। রুশিদান ইসলাম রহমান, রিজওয়ানুল ইসলাম ও কাজী সাহাবউদ্দিন—এই তিনজন মিলে বইটি লিখেছেন।
আইএলওর সাবেক উপদেষ্টা ও বইটির একজন লেখক রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ১৯৭২ সালে যে দেশের মাথাপিছু আয় (জিএনআই) ছিল ১০০ মার্কিন ডলার, এখন তা ২ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই অর্জনে দেশের শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। দেশের উন্নয়নে শ্রমজীবী মানুষেরাই মূল ভূমিকা রেখেছেন, যদিও উদ্যোক্তা শ্রেণি ও প্রযুক্তিরও বড় ভূমিকা আছে।
কিছুটা ভিন্ন দিকে আলোকপাত করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। বলেন, দেশের উন্নয়নে উৎপাদনশীল খাতের ভূমিকা বেড়েছে। ১৯৯০-৯১ সালে দেশের জিডিপিতে উৎপাদনশীল খাতের অবদান ছিল ১০ শতাংশ, এখন তা ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে ব্যতিক্রম, কারণ আমরা আগেভাগে বিশিল্পায়নের দিকে যাইনি। এ ক্ষেত্রে রপ্তানির যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি দেশীয় চাহিদানির্ভর শিল্পেরও ভূমিকা আছে। সরকারের নীতি সহায়তা ছাড়া এসব সম্ভব হয়নি। আলোচ্য বইয়ে উন্নয়নের এই আখ্যান আরও ভালোভাবে উঠে আসতে পারত বলে মত দেন তিনি।
দেশের উন্নয়নের সঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তাঁর মত, এখন সরকারের উচিত, বৈষম্য হ্রাসে জোর দেওয়া।
দেশের মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আছে, এটা আমাদের ইতিবাচক দিক। কিন্তু এই মানুষেরা অসম বিতরণ ব্যবস্থার শিকারে পরিণত হচ্ছেন বলে আক্ষেপ করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। বলেন, শ্রমজীবী মানুষেরা দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হলেও মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
একই সুরে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। বলেন, দেশের শ্রমজীবীরা যেকোনো সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রাখেন, এটা তাঁদের বিশেষ গুণ। এই শ্রমজীবী মানুষেরা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বক্তব্য দেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো কাজি ইকবাল প্রমুখ।