'রমজানে ৯৮ শতাংশ যাত্রী নৈরাজ্যের শিকার'
রমজান মাসে ঢাকায় গণপরিবহনের ৯৫ শতাংশ যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াতে দুর্ভোগের শিকার হন। গণপরিবহন ব্যবস্থার ওপর তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন ৯০ শতাংশ যাত্রী। আর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের শিকার হন ৯৮ শতাংশ যাত্রী।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর ১৫টি এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি করা হয়। আজ শনিবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে এই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়।
পর্যবেক্ষণকালে উঠে এসেছে, ৬৮ শতাংশ যাত্রী চলন্ত বাসে ওঠানামা করতে বাধ্য হন। সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও ৩৬ শতাংশ যাত্রীকে দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। হয়রানির শিকার হলেও অভিযোগ কোথায় করতে হয় জানেন না ৯৩ শতাংশ যাত্রী। তবে ৯০ শতাংশ যাত্রী মনে করেন, অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না বলেই তাঁরা অভিযোগ করেন না। এসব ভোগান্তি নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
সিএনজির ভাড়া প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নগরীতে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশা শতভাগ চুক্তিতে চলাচল করছে। এতে মিটারের প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হন না ৯৩ শতাংশ অটোরিকশা চালক। অনেকটা কাকতালীয়ভাবে অটোরিকশা চালকের পছন্দের গন্তব্যে মিলে গেলে যাত্রীর গন্তব্যে যেতে রাজি হন তাঁরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইফতারের আগ মুহূর্তে যানজট, গণপরিবহন সংকটের কারণে নগরীর সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অফিস ছুটি শেষে ইফতারকে কেন্দ্রকরে ঘরমুখী যাত্রীকে টার্গেট করে নগরীতে চলাচলকারী প্রায় সব বাস এখন রাতারাতি সিটিং সার্ভিস বনে যায়। এসব বাস বিশেষত ইফতারের সময় যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দ্রুত গন্তব্যে যাত্রা করে। বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত নগরীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের প্রায় ৯৭ শতাংশ সিটিং সার্ভিসের নামে দরজা বন্ধ করে যাতায়াত করছে। এতে নগরীর মাঝপথের বিভিন্ন স্টপেজের যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বাসগুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
রাইড শেয়ারিংয়েও ভোগান্তি
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গণপরিবহন নৈরাজ্যে প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে রাইড শেয়ারিং এর নামে চলাচল করা মোটরবাইকগুলো। নগর জুড়ে দেখা গেছে, বিকেল চারটার পর থেকে অ্যাপের পরিবর্তে মৌখিক চুক্তিতে তিন থেকে চার গুণ অতিরিক্ত ভাড়ায় মোটরবাইকগুলো যাত্রী বহন করছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী সেবা পর্যবেক্ষণ উপকমিটির সদস্যরা রমজানের শুরু থেকে যাত্রীসাধারণের কর্মস্থলে যাতায়াত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। নগরীর কমলাপুর, মগবাজার, শনির আখড়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর-১০, মহাখালী, আগারগাঁও, ধানমন্ডি, বনানী, বারিধারা ঘুরে প্রতিবেদনটি করা হয়।