'কৌশলী' প্রচারণায় প্রার্থীরা

>

উখিয়ার রাজাপালংয়ে নারী ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে কক্সবাজার-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন আক্তার। গত রোববার বিকেলে।  প্রথম আলো
উখিয়ার রাজাপালংয়ে নারী ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে কক্সবাজার-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন আক্তার। গত রোববার বিকেলে। প্রথম আলো

জেলার চারটি আসনের প্রার্থী আছেন ৩০ জন। এর মধ্যে অন্তত ২৬ জন কৌশলী প্রচারণায় মাঠে আছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে ১০ ডিসেম্বর থেকে। এর আগে প্রচারণা চালালে তা আচরণবিধির লঙ্ঘন। কিন্তু বসে নেই কক্সবাজার জেলার চারটি আসনের প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে কমবেশি সবাই ‘কৌশলী’ প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।

জেলার চারটি আসনের প্রার্থী আছেন ৩০ জন। এর মধ্যে অন্তত ২৬ জন কৌশলী প্রচারণায় মাঠে আছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন আড্ডায়, সভা-সমাবেশ, বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন।

বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নতুন (তরুণ) ভোটারদের লক্ষ্য করে নির্বাচনী পরিকল্পনার ছক আঁকছেন। প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপে এলাকা এখন সরগরম।

বড় মহেশখালীতে গণসংযোগে কক্সবাজার-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। গত সোমবার বিকেলে।  প্রথম আলো
বড় মহেশখালীতে গণসংযোগে কক্সবাজার-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। গত সোমবার বিকেলে। প্রথম আলো

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাফর আলম গত সোমবার বিকেলে পেকুয়ায় দলীয় প্রতিনিধি সভায় নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। সন্ধ্যায় চকরিয়া পৌরসভায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আরেক প্রতিনিধি সভায় যোগ দেন তিনি। এরপর স্থানীয় কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ ছাড়া আগের দিন রোববার বিকেলে চকরিয়ার খুটাখালীতে দলীয় এক পথসভায় তিনি নৌকার ভোট চেয়েছেন।

জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা এখনো শুরু করেননি তিনি, তবে দলের প্রতিনিধি সভায়  সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন। এলাকার মুরুব্বিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন। তাঁর দাবি, এবার এলাকায় নৌকা প্রতীকের পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রমাণ মিলবে ৩০ ডিসেম্বর।

কক্সবাজার-৩ ( রামু-কক্সবাজার সদর) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলও কয়েক দিন ধরে নির্বাচনী মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গণসংযোগের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন দলীয় সমাবেশে যোগ দিয়ে নৌকায় ভোট চাইছেন।

সাইমুম সরওয়ার বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা নয়, দলীয় কর্মকাণ্ডে তিনি যোগ দিচ্ছেন।

একই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মফিজুর রহমান কয়েক দিন ধরে বাহারছড়া, কলাতলীসহ কয়েকটি গ্রামে উঠান বৈঠক করেন।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনেও বসে নেই প্রার্থীরা। এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক ও বিএনপি প্রার্থী আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।

আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছি। এখন এলাকায় গেলে লোকজন কথা বলতে চায়।’

আলমগীর ফরিদ বলেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে তিনি আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামবেন। এর আগে প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন তিনি।

কক্সবাজার-৪ ( উখিয়া-টেকনাফ) আসনে দলীয় প্রতিনিধি সভা ছাড়াও গণসংযোগ চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহীন আক্তার। রাত-দিন সমানে তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে নারী ভোটারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে নৌকার ভোট চাইছেন।

শাহীন আক্তার বলেন, শেখ হাসিনার নৌকার জন্য তিনি ভোট চাইছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন ১০ ডিসেম্বর থেকে।

উখিয়ার কোটবাজারের ভোটার রফিকুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতা–কর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রার্থীদের ভাষণ সরাসরি প্রচার করা হচ্ছে। এ ছাড়া অনলাইনের নানা মাধ্যমে রঙিন ছবিসহ পোস্টারও প্রচার হচ্ছে। এসব আচরণবিধির লঙ্ঘন হলেও কেউ তা আমলে নিচ্ছে না।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচারণা করা আচরণবিধি লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লক্ষ্য নতুন ভোটার

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জেলার হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৮২ জন। ১০ বছর আগে ২০০৮ সালে ভোটার সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৩১০ জন। এই হিসাবে ১০ বছরে ভোটার বেড়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭২ জন। যার ৯০ শতাংশ তরুণ-তরুণী। ২০১৪ সালের জেলায় ভোটার সংখ্যা ছিলেন ১২ লাখ ৩ হাজার ৬০৮ জন।

কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবুল মঞ্জুর বলেন, পুরোনোদের পাশাপাশি তিনি নতুন ভোটারদের কাছে বেশি যাচ্ছেন। কারণ তাঁরা বেশির ভাগ শিক্ষিত। জীবনের প্রথম ভোটটি তাঁরা কোনো প্রার্থীকে দেবেন—তা বোঝার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে বেশির ভাগ তরুণ-তরুণী ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী মনোভাবের।

একই আসনের বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী গত দুই দিন উখিয়ার কয়েকটি গ্রামে উঠান বৈঠক করেন। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি নির্বাচনী আলোচনা সারেন।

ভোটকেন্দ্র বেড়েছে ৪৬টি

২০১৪ সালের নির্বাচনে জেলার চারটি আসনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪৬৭টি। এবারের নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ৫১৩টি। বেড়েছে ৪৬টি। এর মধ্যে ২০টি কক্সবাজার-৪, ২০টি কক্সবাজার-৩, ২টি কক্সবাজার-২ ও ৪টি বাড়ানো হয়েছে কক্সবাজার-১ আসনে। কিন্তু টেকনাফ, উখিয়া ও রামুর বেশ কিছু কেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তা নেই বলে অভিযোগ করেন ভোটাররা।

এ প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য রাস্তা তৈরি কাজ করছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা।