>* তদবিরেই ছুটতে হচ্ছে ঐক্যফ্রন্টের নেতা সাবেক এই আমলাকে
* তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোট প্রার্থী সেলিম ওসমান
* সেলিম ওসমানের প্রচারে সরগরম নারায়ণগঞ্জ শহর
খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর অগোছালো পোশাকেই কয়েক দিন ধরে দেখা হচ্ছিল এস এম আকরামের সঙ্গে। গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জের লয়েল ট্যাংক সড়কে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হলেন সুবিন্যস্ত পোশাকে। দাড়ি কামিয়েছেন, নীল শার্টের ওপর গাঢ় নীল স্যুট পরেছেন। কথাবার্তাও আগের চেয়ে দৃঢ়। হঠাৎ এ পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইতেই বললেন, ‘আর তো হারানোর কিছু নেই। তারপর আর কী হতে পারে? বড়জোর মারা যেতে পারি।’
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার পর থেকে ক্রমাগত থানা আর মামলার তদবিরেই ছুটতে হচ্ছে ঐক্যফ্রন্টের নেতা সাবেক এই আমলাকে। এই আসনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোট প্রার্থী সেলিম ওসমান। সেলিম ওসমানের প্রচারণায় এখন সরগরম নারায়ণগঞ্জ শহর। আর এস এম আকরাম ব্যস্ত কর্মীদের কারাগারের বাইরে রাখতে। তবে অনেক কিছু করেও পুলিশের হাত থেকে কর্মীদের রক্ষা করতে পারছেন না তিনি। দুই সপ্তাহ আগে তাঁর পাশে বসে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল। এর পরই নাশকতার মামলা দেওয়ার পর এ টি এম কামালসহ কয়েকজন এলাকাছাড়া।
গত সপ্তাহের সংবাদ সম্মেলনে আকরামের পাশে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা গণফোরামের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন চুন্নু। এরপর গত সোমবার রাতে দায়ের হওয়া একটি নাশকতার মামলায় ওই রাতেই চুন্নুকে গ্রেপ্তার করে সদর থানার পুলিশ। সর্বশেষ গতকালের সংবাদ সম্মেলনে আকরামের পাশে ছিলেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক শহিদুল্লাহ কায়সার ও সদস্য জাহেদ উর রহমান। সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার আধঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তাঁদের তুলে নিয়ে যায়। তবে এবার এস এম আকরামও সদর থানায় গিয়ে হাজির হন। পৌনে এক ঘণ্টা পর তাঁদের ছেড়ে দেয় নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পুলিশ।
শহীদুল্লাহ ও জাহেদুরকে নিয়ে থানার পাশেই নিজের বাসার সামনে রাখা গাড়িতে ওঠেন আকরাম। তাঁদের এগিয়ে দিতে আকরামের বাড়ির দোতলার ছাদে থাকা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সবুর খান সেন্টু নিচে নামেন। আকরামের গাড়িটি ছাড়ামাত্রই সাদাপোশাকের চারজন তাঁকে ধরে নিয়ে যান। সোমবার দায়ের হওয়া একটি নাশকতা মামলার আসামি আবদুস সবুর খান, যে মামলার বাদী আসামিদের চেনেন না বলে এর আগে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন।
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরিচয় জানতে দুজনকে থানায় ডেকে আনা হয়েছিল। তাঁদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলন
গতকাল বিকেল চারটার দিকে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন আকরাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘যে আমার সঙ্গে থাকে, তার বিরুদ্ধেই মামলা হয়ে যায়। তারপর গ্রেপ্তার। তাদের জামিন করানো যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় দিন দিন আমার জন্য নির্বাচনটা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাদের আচরণে মনে হচ্ছে, তারা চায় আমি যেন নির্বাচন ছেড়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যাই।’
এস এম আকরাম বলেন, ‘তারা মানুষের ভোটের মাধ্যমে জয়ী হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে। ফলে তারা ভয় দেখিয়ে, মামলা-গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আমাকে কর্মীশূন্য করে সিল মেরে, কেন্দ্র দখল করার মাধ্যমে ভোট ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করছে। এত বাধা সত্ত্বেও আমি যখন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমার পক্ষে মানুষের সমর্থন দেখে তারা ভীত।’ তবে অব্যাহত মামলা ও গ্রেপ্তারের কারণে শেষ পর্যন্ত ধানের শীষের পোলিং এজেন্টরা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আসামিদের নাম জানেন না বাদী
আবদুস সবুর খানকে যে মামলায় ধরা হয়েছে, তাতে আসামি ৭৪ জন। অভিযোগ মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও টাকা চুরির। তবে মামলার বাদী স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থক এনামুল হক বুঝতে পারছেন না এসব আসামির নাম কী করে এজাহারে যুক্ত হলো। তাঁর বক্তব্য, নির্বাচনী ক্যাম্প পোড়ার বিষয়ে পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন, তাতে কোনো আসামির নাম লেখেননি।
মামলার অভিযোগ, ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দুইটার দিকে আসামিরা শহরের পাইকপাড়া এলাকার সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর ২৫ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়। মামলার আসামিদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান, আবদুর সবুর, হাজি নুরুদ্দিন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম অন্যতম।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মামলার বিষয়ে বাদী এনামুলের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমি কারও নাম দিই নাই। আমি থানায় একটা অভিযোগ দিছিলাম, আগুনের ঘটনায়।...আমার ভাঙা, পোড়া চেয়ারটেয়ার এসব বিষয়ে অভিযোগ দিছি।...’ তাহলে মামলায় আসামিদের নাম কীভাবে এল, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নামগুলি তো...প্রশাসনিকভাবে কীভাবে কী দিছে তারা...আমি তো বুঝতে পারছি না জিনিসটা। এহন তো আমারই টেনশন।’
বাদীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে মামলা করার পর ওরে (বাদী এনামুল) তো বিএনপি খুব থ্রেট (হুমকি) করতাছে। সেই কারণে ও আপনাদের এ রকম বলছে। আমার সঙ্গে ওর কথা হইছে। আমি বলছি আইসা একটা জিডি করো।’
বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এস এম আকরামের পক্ষে যাতে নেতা-কর্মীরা কাজ করতে না পারেন, এই কারণে তাঁদের আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের গায়েবি মামলায় আমরা এলাকাছাড়া। আমরা কীভাবে নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করলাম। নারায়ণগঞ্জ শহরে কার ঘাড়ে কয়টা মাথা তাদের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করে আগুন দেবে!’