নিম্ন আদালতে রায় শোনার পর তাঁরা ছিলেন নির্বিকার। গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের রায়ে তাঁদের অধিকাংশের সাজা বহাল থাকার পরও তাঁরা নির্বিকার থাকতেন কি না, তা আর জানা গেল না। কেননা, উচ্চ আদালতে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানিতে আসামিদের হাজির করা হয় না। তবে অপরাধ করে পার পাননি র্যাবের ২৫ জন সাবেক সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের সাবেক একজন নেতা ও তাঁর সহযোগীরা।
সাত খুনের মামলায় নারায়ণগঞ্জের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের সাবেক স্থানীয় নেতা নূর হোসেন এবং র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন, এম মাসুদ রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এর আগে জেলা জজ আদালত ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া ৯ আসামির দণ্ড বহাল রয়েছে।
আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেন। যার মধ্য দিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তিন বছর তিন মাসের মাথায় আইনি লড়াইয়ের দুটি ধাপ শেষ হলো। এত দিন নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতে টিকবে না বলে যে শঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল, তা অমূলক হয়ে গেল।
আলোচিত এই মামলায় গত ১৬ জানুয়ারি নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়ে ৩৫ আসামির মধ্যে ২৮ আসামি আপিল করেন, বাকি ৭ জন ঘটনার পর থেকেই পলাতক।
সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন সেনাবাহিনী থেকে, ২ জন নৌবাহিনী থেকে, ৩ জন বিজিবি, ৭ জন পুলিশ ও ২ জন আনসার থেকে র্যাবে যোগ দিয়েছিলেন। সাত খুনের মামলার পর তাঁদের নিজ নিজ বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির পর চলতি বছরের ২২ মে হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল, ৩৩ কার্যদিবসে ২৬ জুলাই শুনানি শেষ হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ডেথ রেফারেন্স আংশিক মঞ্জুর করে ও আসামিদের আপিল খারিজ করে রায় দেওয়া হয়।
রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন র্যাব একটি এলিট ফোর্স এবং মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য তারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। কিছু ব্যক্তির জন্য সামগ্রিকভাবে এই বাহিনীকে দায়ী করা যায় না এবং তাদের ভাবমূর্তি নষ্টেরও কোনো কারণ নেই।
রায়ে যে ১১ জনের সাজা কমেছে, রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, র্যাব রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বিশেষ বাহিনী। মানুষের আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক। তাদের দায়িত্ব জনগণের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ বাহিনীর কিছু উচ্ছৃঙ্খল সদস্য নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। সুরক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে তাঁরা ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে তাঁদের বিচার হয়েছে। তবে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে র্যাবের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ধূলিসাৎ হতে পারে না। কিছু সদস্যের কারণে সামগ্রিকভাবে পুরো বাহিনীকে দায়ী করা যায় না।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অপরাধীরা কোনো সুযোগে যদি বেরিয়ে যেতে পারত, তাহলে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হতো। আমি মনে করি, এটা কোনো বাহিনী করেনি। বাহিনীর কিছু লোক এ ঘৃণ্য কাজ করেছে। তবে বাহিনী এতে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবেই কাজ করতে পেরেছে।’
হত্যাকাণ্ডে আর্থিক লেনদেন হয়েছে
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যে সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে, হেফাজতে তাঁদের মৃত্যুযন্ত্রণা ছিল ভয়াবহ ও অকল্পনীয়। র্যাব সদস্যরা এতটাই নির্দয় ছিলেন যে তাঁদের হত্যার পর তলপেট ছুরি দিয়ে কেটে বস্তাবন্দী করা হয়। প্রতিটি বস্তার সঙ্গে ১০টি ইট বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে লাশ নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এ নৃশংসতায় প্রতীয়মান হয়, তাঁরা মরদেহের ওপর কতটা নির্দয় ছিলেন।
রায়ে বলা হয়, আসামিরা যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে এসেছে, এই হত্যাকাণ্ড ছিল সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। আর্থিক লেনদেন হয়েছে নূর হোসেনের সঙ্গে। নূর হোসেন হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তারেক সাঈদ, আরিফ ও মাসুদ রানা।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, আসামিপক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এ মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষ্য নেই এবং আর্থিক লেনদেনেরও কোনো প্রমাণ নেই। র্যাবের এডিজি জিয়াউল হাসান অর্থের লেনদেনের বিষয়ে আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ ছাড়া নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম তারেক সাঈদের সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, ‘নূর হোসেন যত টাকা দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি টাকা দেব, নজরুলকে ছেড়ে দেন।’ পর্যালোচনায় দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনায় আর্থিক লেনদেন হয়েছে। আর অনৈতিক লেনদেনের কোনো তথ্যভিত্তিক প্রমাণ থাকে না।
মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়ার বিষয়ে রায়ে বলা হয়, অপরাধের ধরন বিবেচনায় তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে সেটা হবে কঠোর শাস্তি। তাই তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
প্রতিক্রিয়া
তারেক সাঈদ ও মাসুদ রানার আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রায় হয়েছে, তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। আপিলের সুযোগ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। মক্কেল ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। তাঁরা দুজনই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন। তাঁরা এখনো বলতে চান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তাঁরা নজরুলকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের আইনজীবী এস আর এম লুৎফর রহমান আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, রায়ে তাঁরা সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে রায়ের কপি পাওয়ার আগে আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করা হবে। তাঁর দাবি, এই মামলায় আসামিপক্ষে আইনের বিধান ও লিগ্যাল সাবমিশন উচ্চ আদালত বিবেচনায় আনেননি। যেমন ১০৬ জন সাক্ষীর মধ্যে কোনো সাক্ষী নূর হোসেনের সম্পৃক্ততার কথা বলেননি। এ ছাড়া নূর হোসেনের ফোনে কথা বলার তালিকা মামলায় উপস্থাপন করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
আদালত প্রাঙ্গণ ও রায়
আলোচিত সাত খুন মামলার রায় ঘোষণাকে ঘিরে গতকাল সকাল থেকে উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশে ছিল কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে নিহত ও আসামিদের পরিবারের সদস্য, সাংবাদিক ও আইনজীবীরা আদালতকক্ষের সামনে ভিড় জমান। গণমাধ্যমকর্মীদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে আদালতকক্ষে প্রবেশ করতে হয়। সাড়ে ১০টার দিকে এজলাসে আসেন বিচারপতিরা। অনুমতি সাপেক্ষে এরপর গণমাধ্যমকর্মীরা আদালতকক্ষে প্রবেশ করেন। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মূল ভবনের ১১ নম্বর কক্ষে অবস্থিত এই আদালতের দিকে দৃষ্টি ছিল সবার। আদালতকক্ষের সামনে নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ রায় ঘোষণা শুরু করেন। মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রায় ঘোষণা শেষ করেন আদালত।
তখন উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে যান, বিরাজ করে একধরনের নীরবতা। এ সময় তারেক সাঈদের স্ত্রীকে কাঁদতে দেখা যায়। উপস্থিত নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের মধ্যে দেখা যায় একধরনের স্বস্তি। রায় ঘোষণার পুরোটা সময় তাঁরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারেক সাঈদের স্ত্রী বেশির ভাগ সময় মুখে ঢেকে রেখেছিলেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সারওয়ার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী, এস এম শাহজাহান, এস আর এম লুৎফর রহমান আকন্দ, আমিনুল ইসলাম, মো. মজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সারওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ৩৫ আসামির মধ্যে ২৮ আসামি আপিল করেন। বাকি ৭ জনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ৫ আসামির বিষয়টি ডেথ রেফারেন্সে নিষ্পত্তি হয়েছে। আর দুজনের মধ্যে ১০ বছর কারাদণ্ড পাওয়া পলাতক মোখলেছুর রহমান এবং এএসআই কামাল হোসেন আপিল করেননি। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে দেওয়া বিচারিক আদালতের সাজা বহাল রয়েছে।
তিন বছর আগের সেই দিনটি
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকায় র্যাবের সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে কাউন্সিলর নজরুলের গাড়ি থামান। র্যাব গাড়ি থেকে নজরুল, তাঁর তিন সহযোগী ও গাড়িচালককে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন আইনজীবী চন্দন সরকার। তিনি অপহরণের বিষয়টি দেখে ফেলায় তাঁকে ও তাঁর গাড়িচালককেও র্যাব তুলে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের সবাইকে হত্যা করে ওই রাতেই পেট কেটে এবং ইটের বস্তা বেঁধে সবার লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।
৩০ এপ্রিল ছয়জন ও পরদিন একজনের লাশ ভেসে ওঠে। সাতজন হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম। এর এক সপ্তাহের মধ্যে এ ঘটনায় র্যাব-১১-এর অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যুক্ততার তথ্য প্রকাশ পায়, টাকার বিনিময়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। একসঙ্গে সাতজনকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা ও গুমের নৃশংসতায় শিউরে ওঠে মানুষ। তারেক সাঈদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর জামাতা হওয়ায় বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পায়।
একই সময়ে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত নূর হোসেনের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানের একটি টেলিকথোপকথন প্রকাশ পায়। যাতে নূর হোসেন ভারতে পালাতে শামীম ওসমানের সহায়তা চান। এরপর নূর হোসেন পালিয়ে যান ভারতে। ওই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা আন্দোলনে নামেন। সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন নজরুলের অনুসারীরা ও এলাকাবাসী। গণমাধ্যমে ও সারা দেশে বিষয়টি হয়ে ওঠে আলোচনার প্রধান বিষয়।
মামলা ও বিচার
এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটির বাদী নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এবং অপরটির বাদী আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। হাইকোর্টের নির্দেশে র্যাবের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। তার আগে তিনজনকে নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত নেওয়া হয় এবং তাঁদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল র্যাবের ২৫ জন (চাকরিচ্যুত) কর্মকর্তা, সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়, শুরু হয় বিচারকাজ। সাত মাসে ৩৮ কর্মদিবসে মামলার কার্যক্রম ও শুনানি চলে। এরপর ১৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়। বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার পর মামলার নথিপত্র গত ২২ জানুয়ারি হাইকোর্টে পৌঁছায়, তা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুই মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা। দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ২৮ আসামি জেল আপিল ও আপিল করেন। মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি ওই বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন। এরপর ২২ মে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।
যোগাযোগ করা হলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হলো যে অপরাধ করে কেউই পার পাবে না। বাহিনীর নাম ও পদবি ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ করার পরও তাঁদের যে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে, সেটাই দৃষ্টান্ত। এই রায় জনগণের মনে আস্থা বাড়িয়েছে।
৩৫ আসামির সাজা
আসামির নাম পরিচয়/ অবস্থান নিম্ন আদালত হাইকোর্ট বহাল
নূর হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আ.লীগের মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
সাবেক সহ-সভাপতি ও
ওয়ার্ড কাউন্সিলর
তারেক সাঈদ মোহাম্মদ সাবেক অধিনায়ক (র্যাব-১১) মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল
আরিফ হোসেন র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
সাবেক মেজর
মাসুদ রানা র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার, মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
সাবেক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার
এমদাদুল হক হাবিলদার মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
আরিফ হোসেন আরওজি-১ মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
হীরা মিয়া ল্যান্সনায়েক মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
বেলাল হোসেন ল্যান্সনায়েক মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
আবু তৈয়ব আলী সিপাহি মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
মো. শিহাব উদ্দিন কনস্টেবল মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
পুর্নেন্দু বালা, এসআই মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
রুহুল আমিন কর্পোরাল ১০ বছর বহাল
বজলুর রহমান এএসআই ৭ বছর বহাল
আলী মোহাম্মদ নূর হোসেনের সহযোগী মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন
মিজানুর রহমান দিপু নূর হোসেনের সহযোগী মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন
রহম আলী নূর হোসেনের সহযোগী মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন
আবুল বাশার নূর হোসেনের সহযোগী মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন
নাসির উদ্দিন হাবিলদার ৭ বছর বহাল
আবুল কালাম আজাদ এএসআই ১০ বছর বহাল
নুরুজ্জামান সৈনিক ১০ বছর বহাল
আব্দুল আলীম সৈনিক মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
বাবুল হাসান কনস্টেবল ১০ বছর বহাল
হাবিবুর রহমান কনস্টেবল ১০ বছর বহাল
আসাদুজ্জামান নূর সৈনিক মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন
জামাল উদ্দিন নূর হোসেনের সহযোগী মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন
মোর্তুজা জামান চার্চিল নূর হোসেনের সহযোগী মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন
এনামুল কবীর সার্জেন্ট মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন
সেলিম নূর হোসেনের সহযোগী মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন
বর্তমানে ভারতে বন্দি
পলাতক ৭ আসামি
মো. মোখলেছুর রহমান কর্পোরাল ১০ বছর বহাল
মহিউদ্দিন মুন্সী সৈনিক মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
আল আমিন শরীফ সৈনিক মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
তাজুল ইসলাম সৈনিক মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
কামাল হোসেন এএসআই ১০ বছর বহাল
সানাউল্লাহ ছানা নূর হোসেনের সহযোগী মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন
শাহজাহান নূর হোসেনের ম্যানেজার মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন