৪৪ টিভি লাইসেন্স দিয়ে ভুক্তভোগী আমার সরকারই: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে দেওয়া হয়েছিল বলেই আজ মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ৪৪টি টেলিভিশনের লাইসেন্স দিয়েছে। এতগুলো টেলিভিশন (টিভি) লাইসেন্স দেওয়ায় ভুক্তভোগী তাঁরাই। কারণ এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ঢালাওভাবে সরকারের সমালোচনা করা হয়। অবশ্য এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানও হচ্ছে।
তরুণ প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নিজের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলে ‘মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি’ (এমএনপি) সেবার উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আমার বর্তমানকে উৎসর্গ করছি তরুণদের ভবিষ্যতের জন্য। আমাদের বর্তমান, আমরা তো চলেই যাচ্ছি। আমাদের বর্তমানে যতটুকু কাজ আমরা এগোতে পারি, সেটা আমরা উৎসর্গ করেছি তরুণ প্রজন্মের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই চলার গতিটা যেন কখনো থেমে না যায়।’
তরুণদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের এটাই বলব যে মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া শিখতে হবে। আর প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও অভ্যস্ত হতে হবে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। যত দিন যায়, প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তি বের হয়।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যত দিন ক্ষমতায় আছি এই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেই পদক্ষেপগুলো আমরা নেব।’
সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার তাঁর সরকারের উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছে। এতে সারা দেশে ইন্টারনেট সার্ভিসের আওতায় এসেছে। এখন তাঁর সরকার সাবমেরিন কেবলের তৃতীয় সংযোগ গ্রহণেরও চিন্তাভাবনা করছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্রড ব্র্যান্ড সার্ভিসটা একেবারে উপজেলা ও গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। প্রতিটি গ্রামকে আমরা শহরে উন্নীত করছি।’ ‘অথচ বিএনপি সরকারের সময়ে বিনা মূল্যে সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ তারা নষ্ট করেছিল দেশের তথ্য পাচার হয়ে যাওয়ার কথা বলে’, অভিযোগ করেন তিনি।
তাঁর সরকারের প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশে ই-ফাইলিং সুবিধার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বাইরে (বিদেশে) গেলেই এখান থেকে সোজা ফাইল চলে যায়। সেখানে বসে কাজ করি। একটা কর্মঘণ্টাও আমার নষ্ট হয় না। এটা হলো বাস্তবতা এবং এখন আমরা ফাইভ-জির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তি যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে এটা আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজে লাগছে, কাজে লাগবে।’
‘মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি’ (এমএনপি) সেবা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার আরেকটি পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। একটা সিম থেকে যেকোনো অপারেটরে আরেকটা সিমে নম্বর পরিবর্তন করা বা একটা অপারেটর থেকে আরেকটা অপারেটরে যাওয়ার যে আধুনিক প্রযুক্তি. যা পৃথিবীর খুব সীমিত দেশ ব্যবহার করে, আমরা সেই যুগে প্রবেশ করছি।’
তিনি বলেন, ‘যদিও এটা একটা জটিল বিষয়, সেটাকে আজকে সহজভাবে করে দেওয়া হয়েছে। এই এমএনপি সেবা অনেকের জন্য সুবিধা হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কোথায় ছিলাম, আর এখন কোথায় এসেছি। মাত্র ১০ বছরে এই পরিবর্তন হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে বলে। আর তরুণ প্রজন্ম ভোট দিয়েছে বলে।’ তাঁর সরকার প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৮টি হাইটেক পার্ক করার পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা। ইতিমধ্যে দুটি হয়েছে। ৩৫৫ একর জমির ওপর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে। আমরা ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানি করতে পারব। তরুণদের কর্মসংস্থানের আর অভাব হবে না।’
ইউরোপ থেকে ৫/৬ ঘণ্টা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০/১২ ঘণ্টা সময় এগিয়ে থাকার ভৌগোলিক সুযোগ নিয়ে দেশের তরুণেরা ঘরে বসেই আউট সোর্সের মাধ্যমে অনেক টাকা রোজগার যাতে করতে পারে, তার সুযোগ সরকার সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা এই সময়ের ব্যবধানকে কাজে লাগিয়ে অর্থ রোজগার করতে পারছে। বাংলাদেশের তরুণেরা লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের মাধ্যমে সারা বিশ্বে কাজ করতে পারছে। একটি অ্যাপসে নয়টি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে আমাদের তরুণেরা অন্ধকার থেকে আলোর পথে এসেছে।’এ সময় তরুণদের মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা এবং প্রযুক্তির আপডেট জ্ঞান লাভ করার প্রতি তাগিদ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কম্পিউটার যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সামগ্রীর ওপর শুল্ক হ্রাসে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে দেশের উন্নয়নে কিছু ট্যাক্স প্রদান জরুরি বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ট্যাক্স দিতে হবে। তাহলেই উন্নয়নটা ত্বরান্বিত হবে। কথায় কথায় ট্যাক্স কমানোর দাবি করলে উন্নয়ন হবে কীভাবে! ’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ট্যাক্স দিচ্ছেন বলেই বাজেট সাত গুণ বৃদ্ধি করতে পেরেছি। সবচেয়ে বড় কথা, বাইরের কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। এটা আমাদের জন্য সম্মানের। সেই সম্মানটা ধরে রাখতে চাই। আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, সাংসদ নাহিন রাজ্জাক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মোবাইল অপারেটর সার্ভিসের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে এমএনপি সার্ভিসের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
বহুল প্রতীক্ষিত এই এমএনপি সার্ভিসের আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও পরীক্ষামূলকভাবে ১ অক্টোবর থেকে দেশে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্বে ৭২তম দেশ হিসেবে এই সার্ভিস বাংলাদেশে চালু করেছে সরকার।