সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হৃদ্রোগ সেবা স্বাভাবিক
২৬টি ব্র্যান্ডের স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ঠিক হয়েছে
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ২৬টি ব্র্যান্ডের স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) নির্ধারণ করেছে। হৃদ্রোগীদের জীবনদায়ী এই চিকিৎসাসামগ্রীর মূল্যতালিকা হাসপাতালের দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখতে হবে। এমআরপি, নিবন্ধন নম্বর ও মেয়াদ লেখা নেই এমন কোনো স্টেন্ট হাসপাতালে ব্যবহার করা যাবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের পরিচালক মো. গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘২১টি প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা ৪৭টি ব্র্যান্ডের স্টেন্ট (রিং) দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ২৬টি ব্র্যান্ডের স্টেন্টের এমআরপি ঠিক করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সব ব্র্যান্ডের স্টেন্টের এমআরপি ঠিক করা হবে। আজ-কালের মধ্যে সব হাসপাতালে আমাদের সিদ্ধান্ত পৌঁছে যাবে।’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হৃদ্রোগে আক্রান্ত কিছু রোগীর রক্তনালি সরু বা বন্ধ (ব্লক) হয়ে যায়। এতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। রক্ত চলাচল সচল রাখতে স্টেন্ট ব্যবহার করা হয়। স্টেন্ট অনেকটা কালভার্টের মতো কাজ করে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, সরকারি-বেসরকারি ২৭টি হাসপাতালে বর্তমানে স্টেন্ট পরানো হয়। এসব হাসপাতালে বছরে প্রায় ১৮ হাজার স্টেন্ট ব্যবহৃত হয়।
গত বুধবার স্টেন্টের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা কয়েকটি হাসপাতালে স্টেন্ট সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এতে ওই হাসপাতালগুলোতে জীবনদায়ী এই সেবা বন্ধ ছিল। ঔষধ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর বুধবারই ব্যবসায়ীরা স্টেন্ট সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন। এতে গতকাল সকাল থেকেই হাসপাতালগুলোয় হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগীদের রক্তনালিতে স্টেন্ট লাগানো শুরু হয়।
গতকাল রোগীদের স্বাভাবিক চিকিৎসা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।
বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান প্রথম আলোকে বলেন, বুধবারে আটজন রোগীর স্টেন্ট পরানোর কথা ছিল। কিন্তু স্টেন্ট পাওয়া যায়নি বলে তা করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য গতকাল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে তিনি জানান।
চিকিৎসাসামগ্রী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেডিকেল ডিভাইসেস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে স্টেন্টের সর্বোচ্চ (৫০ হাজার) ও সর্বনিম্ন (২৫ হাজার) মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে তথ্য গণমাধ্যমে এসেছিল। ওই তথ্য ছিল ভুল। বিষয়টি বোঝার জন্য তাঁরা কয়েক ঘণ্টা স্টেন্ট সরবরাহ বন্ধ রেখেছিলেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনার পর সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ল্যাবএইড, ইউনাইটেডসহ একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব হাসপাতালে সেবা বন্ধ হয়নি।
গতকাল বেলা ১১টায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা গেছে, রোগীদের রক্তনালিতে স্টেন্ট লাগানোর জন্য অস্ত্রোপচার চলছে। রাজধানীর টিকাটুলী এলাকা থেকে আসা একজন রোগীর নক্তনালিতে স্টেন্ট পরানো হয় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। রোগীর মেয়ে বলেন, তাঁর বাবার রক্তনালিতে দুটো স্টেন্ট পরানো হয়েছে। দাম পড়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোন কোম্পানির, কোন দেশের স্টেন্ট, তা তিনি বলতে পারেননি। তিনি বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যস্থতায় স্টেন্টের দাম ঠিক হয়।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আফজালুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের অন্য সব কাজের মতো স্টেন্ট লাগানোর কাজও স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে। গতকাল (বুধবার) যেসব রোগীর রিং লাগানো সম্ভব হয়নি, আজ (বৃহস্পতিবার) তাদের রিং লাগানো হবে। এ জন্য হাসপাতালে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ১০টি স্টেন্ট ব্যবহার করা হয় বলে তিনি জানান।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্টেন্ট বা রিংয়ের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় অধ্যাপক মোস্তফা জামান বলেন, বুধবারে বাদ পড়া সবারই স্টেন্ট গতকাল পরানো হয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলেছে, গতকাল ১১টি প্রতিষ্ঠানের ২৬টি ব্র্যান্ডের স্টেন্টের এমআরপি নির্ধারণ করেছে অধিদপ্তর। এসব স্টেন্ট মূলত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। ভারত ও চীনে তৈরি কোনো স্টেন্টের নিবন্ধন নেই বাংলাদেশে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একই স্টেন্টের দাম একেক হাসপাতালে একেক রকম। প্রকৃত দাম রোগীরা জানতে পারে না। এতে রোগীরা ঠকছে। তাই স্টেন্টের মোড়কে এমআরপি, নিবন্ধন নম্বর ও মেয়াদ উল্লেখ করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রশাসনের এই উদ্যোগ সম্পর্কে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক এম এ মালেক বলেন, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের কারণে স্টেন্টের মূল্যের ক্ষেত্রে সমতা আসবে। এর ফলে স্টেন্টের মূল্যও কম হবে। লাভবান হবে দরিদ্র রোগী।