২০৩৫ সালে জনসংখ্যা হবে সাড়ে ৩ কোটি

২০৩৫ সালে ঢাকার জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ হবে। এই সময়ের মধ্যে পুরো ঢাকায় ৯ শতাংশের মতো ব্যবহার উপযোগী ভূমি বাড়বে। অন্য দিকে ঢাকার পূর্বাঞ্চলে উন্নয়ন হলে ৫৯ শতাংশ ভূমি ব্যবহার করার উপযোগী হবে।

 ২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকার উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত দিয়েছেন। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বুধবার আয়োজিত দিনব্যাপী এই সম্মেলনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়র এবং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাজধানীর পূর্বাঞ্চল এলাকাটি এখনো গ্রামীণ। মূল ঢাকার খুব কাছাকাছি অবস্থিত এই অঞ্চলে ভূমির প্রাপ্যতা রয়েছে। সেখানে পরিকল্পিত নগরায়ণের সুবিধা কাজে লাগানো হলে ঢাকার অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ও বাসযোগ্যতা বাড়বে। তবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু না করলে পূর্বাঞ্চলেও অপরিকল্পিত নগরায়ণ হবে, যা ঢাকার যানজট ও বাসযোগ্য পরিবেশের আরও অবনতি ঘটাবে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। ২০৩৫ সালে এই জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ হবে। এমন জনসংখ্যার একটি নগরীর উৎপাদনশীলতা বাড়ানো গেলে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারে। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ঢাকার সম্প্রসারণ করতে হবে।

গতকালের সম্মেলনের শুরুতে ঢাকাকে একটি আধুনিক নগর বানানোর সুযোগ নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান। তিনি বলেন, ঢাকার মতো জনবহুল একটি নগরীর বিস্তার হয়েছে অপরিকল্পিত এবং অগোছালোভাবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে তীব্র যানজট, বাসযোগ্যতার নিম্নমান, বন্যা ও ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।

 ‘পূর্ব ঢাকার জন্য এক নতুন উদাহরণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন রামা। প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমান ঢাকার আয়তনের প্রায় ৪০ শতাংশের সমান পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা। পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলো মূলত গ্রামীণ। তবে শহরের গুলশানের মতো উন্নত ও আধুনিক এলাকার মাত্র ৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হলে পূর্ব ঢাকার উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রবন্ধে বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন হলে এক দিকে পুরো ঢাকার উৎপাদনশীলতা ও বাসযোগ্যতা বাড়বে, আবার ঢাকার অন্যান্য এলাকার যানজট ও ভিড় কমাতে সহায়ক হবে। তবে মার্টিন রামা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বর্তমানের মতো অপরিকল্পিত অবস্থায় চলতে থাকলে পূর্ব ঢাকার উৎপাদনক্ষমতাও বাকি ঢাকার মতো কম হবে। পূর্বাঞ্চলেরও যানজটে স্থবির হয়ে পড়ার এবং বন্যা ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। বর্তমানে ঢাকার জনবহুল এলাকাগুলোতে নতুন করে অবকাঠামো করার চেয়ে পূর্ব ঢাকার টেকসই উন্নয়ন অনেক কার্যকর এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক হবে।

দুপুরের বিরতির পর যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্থনি ভেনাবলস ও গবেষণা সহযোগী জুলিয়া বার্ড তাঁদের উপস্থাপনায় ঢাকার পূর্ব অংশ পরিকল্পনামাফিক উন্নয়নের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন। ঢাকার এই অংশকে পুনর্বিন্যাস করতে তাঁরা চারটি মডেল উপস্থাপন করেন।

যথাযথ পরিকল্পনার সঙ্গে ঢাকার পূর্বাঞ্চলকে ঢেলে সাজালে ওই অঞ্চলের চেহারা ২০৩৫ সালে কেমন হতে পারে, তা উপস্থাপনায় দেখানো হয়। তাঁরা বলেন, পূর্বাঞ্চলে উন্নয়ন হলে ৭ লাখ ৮০ হাজার গৃহস্থালি ঘরবাড়ি তৈরির মাধ্যমে সেখানে ৩৩ লাখ মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত হবে। এর সঙ্গে শহুরে চাকরির মোট ৮ শতাংশের জায়গা হবে ওই অঞ্চলে। ২০৩৫ সালের মধ্যে যেখানে পুরো ঢাকায় মাত্র ৯ শতাংশ ব্যবহার উপযোগী ভূমি বাড়বে, সেখানে একই সময়ে শুধু ঢাকার পূর্বাঞ্চলে উন্নয়ন হলে ৫৯ শতাংশ ভূমি ব্যবহার করার উপযোগী হবে।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকার কেন্দ্র থেকে আশপাশের অঞ্চলগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার তিন থেকে চার গুণ। রাজধানীর আশপাশের এই অঞ্চলগুলোতে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই গার্মেন্টস, বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্পকারখানা ও ঘরবাড়ি গড়ে উঠছে। এই অঞ্চলগুলোতেও উন্নয়ন দরকার।

আলোচনার এই অংশে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া আলোচনায় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের পরিচালক এস এম মাহবুবুর রহমান ও বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ইফফাত শরীফ অংশ নেন।