২ শতাংশের বেশি টিএফএ নিষিদ্ধ করছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ
মানুষের খাবারে ব্যবহৃত তেল ও চর্বিতে ২ শতাংশের বেশি ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড (টিএফএ) নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রবিধান প্রণয়ন করেছে তারা। সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। কেউ এই বিধান না মানলে তাকে তিন বছর কারাদণ্ড বা ১২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। তবে খাবারে ব্যবহৃত প্রাণিজ উৎসজাত ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড এসব বাধ্যবাধকতার বাইরে থাকবে।
আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই খসড়া প্রবিধান উন্মুক্ত করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের বিজয় ৭১ অডিটরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে খসড়া প্রবিধান উপস্থাপন করেন খসড়া প্রবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ। ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের সঙ্গে হৃদ্রোগ–ঝুঁকির উচ্চহার ব্যাপকভাবে সম্পর্কযুক্ত বলে এরই মধ্যে প্রতীয়মান হয়েছে।
ঢাকার পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও) বা বনস্পতি (যেমন ডালডা) নমুনার ৯৬ শতাংশে অতিরিক্ত মাত্রায় টিএফএ পান গবেষকেরা। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এক দল গবেষক এ–সংক্রান্ত গবেষণাটি করেন। গত বছরের এই গবেষণায় প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি পেয়েছিলেন তাঁরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত (২ শতাংশ) মাত্রার তুলনায় এটি ১০ গুণের বেশি। ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডসগুলোর ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করে এই ফল পেয়েছিলেন গবেষকেরা। গবেষণায় পাওয়া এই ফলের ভিত্তিতেই প্রবিধানটি তৈরি করছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
খসড়া প্রবিধানে বলা হয়েছে, প্রাণিজ উৎসজাত টিএফএ বাদে চর্বির ইমালসনসহ যেকোনো তেল ও চর্বি, যা এককভাবে বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বা যেকোনো খাদ্যের উদ্দেশ্যে অথবা খুচরা ব্যবসা, ক্যাটারিং ব্যবসা, রেস্তোরাঁ, প্রতিষ্ঠান, বেকারি বা যেকোনো খাদ্য স্থাপনার খাদ্য প্রস্তুতের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাতে ২ শতাংশের বেশি টিএফএ থাকলে তা বিক্রয়, বিতরণ, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন এবং আমদানি করা যাবে না।
মোড়কজাত খাদ্যের লেবেল বাধ্যতামূলকভাবে টিএফএ সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ করতে হবে। কোনো খাদ্যে আংশিকভাবে পিএইচও ব্যবহৃত হলে তার নির্দিষ্ট পরিমাণসহ অন্যান্য তথ্য মোড়কজাত খাদ্যের লেবেলিংয়ে এর উপাদান তালিকায় উল্লেখ করতে হবে। পিএইচওর সংমিশ্রণে তৈরি কোনো খাদ্য উপকরণ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হলে সে ক্ষেত্রেও পিএইচওর পরিমাণসংক্রান্ত তথ্য সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। মোড়কীকরণ, লেবেলিং, বিপণন অথবা বিজ্ঞাপনে কোনো খাদ্যপণ্য টিএফএ মুক্ত এমন দাবি করা যাবে না।
অনুষ্ঠানে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাইউম সরকার বলেন, কারও বিরুদ্ধে নয়, কারও ক্ষতিসাধনের জন্যও নয়। শুধু দেশবাসীকে একটি রোগ থেকে রক্ষা করতেই প্রবিধানটি প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, খসড়া প্রবিধানটি শিগগিরই খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ব্যবসায়ীসহ সব পক্ষের মতামতের পরই চূড়ান্ত করা হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য রেজাউল করিম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষক নাজমা শাহীন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান; যা মোট মৃত্যুর ৩১ শতাংশ। কেবল ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদ্রোগে মারা যান। এর মধ্যে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী টিএফএ।