১৯৭১ সালে শরণার্থীশিবিরে মৃতের সংখ্যা কত

কলকাতার সল্টলেক শরণার্থী শিবির, ১৯৭১
ছবি: সংগৃহীত

আমরা জানি, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। এ-ও জানি, মহামারি ও অপুষ্টিতে ভুগে সেখানে মৃত্যুবরণ করে অসংখ্য শরণার্থী। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে যেমন লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে দেশের ভেতরে, তেমনি দেশের বাইরে শরণার্থীদের এই মৃত্যু অনিবার্যভাবে মুক্তিযুদ্ধেরই পরিণতি। কিন্তু শরণার্থীশিবিরে ঠিক কতজন মৃত্যুবরণ করেছিল, সেই সংখ্যা নির্দিষ্ট করে পাওয়া যায় না কোথাও। মুক্তিযুদ্ধের চিকিৎসা ইতিহাস বিষয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে আমরা এ বিষয়টির ওপর আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি।

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল বিভিন্ন দেশ থেকে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার মতো কোনো একটি দেশ থেকে এককভাবে এক কোটি লোক বাস্তুচ্যুত হওয়া বা কোনো একটি দেশ এককভাবে এক কোটি শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ঘটনা কখনো ঘটেনি।

সারণি–১

১৯৭১–এর এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শরণার্থীর স্রোত বাড়তে শুরু করলে ভারতীয় সংবাদপত্রে মাসওয়ারি ও রাজ্যওয়ারি শরণার্থীর হিসাব প্রচার করে ভারত সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা। একাত্তরের ডিসেম্বরের প্রথম ভাগে তৈরি সারণিতে (সারণি–১) দেখা যায়, সে সংখ্যা প্রায় কোটির কাছে পৌঁছেছে।

পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় সর্বাধিক শরণার্থী আশ্রয় নিলেও এই সারণি থেকে রাজ্যওয়ারি শরণার্থী পরিস্থিতির পুরোটা বোঝা যায় না। যেমন ধরা যাক, ১৯৭১ সালে মেঘালয় রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১০ লাখ কিন্তু সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল প্রায় ৭ লাখ বাংলাদেশি শরণার্থী। রাজ্যের ছোট্ট একটি শহর বালাট। বালাটের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪ হাজার, কিন্তু সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল প্রায় ৫০ হাজার শরণার্থী। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ। আর বাংলাদেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল ৭২ লাখ ৩৫ হাজার। অন্যদিকে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার পাহাড়ি এলাকার জনসংখ্যা ছিল ৬১ হাজার; আর সেখানে শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল ২ লাখ ১১ হাজার। বিভিন্ন শহরে বিদ্যমান জনসংখ্যার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি শরণার্থীর আসার কারণে সেখানকার বাজারঘাট থেকে শুরু করে সুপেয় পানি এবং যত্রতত্র মলমূত্রের চাপ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খাদ্যাভাব—সব মিলিয়ে এসব অঞ্চলে এক অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিবেশের ভারসাম্যে ব্যাপক বিরূপ পরিবর্তনের ফলে সংক্রামক রোগব্যাধির দ্রুত বিস্তার ঘটে।

যেকোনো দুর্যোগে এবং ব্যাপক সংখ্যায় বাস্তুচ্যুতির ক্ষেত্রে সংক্রামক রোগব্যাধির নিয়ন্ত্রণে প্রথমেই স্যানিটেশন, হাইজিন এবং সুপেয় পানির সরবরাহের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময়কার ভারতের এই রাজ্যগুলোতে স্যানিটেশনের বিশেষ প্রচলন ছিল না। কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে যেসব জায়গায় শরণার্থীশিবির স্থাপন করা হয়, তার বেশির ভাগই ছিল বিরান নিম্ন জলাভূমি। সেগুলোকে তখন মাটি ভরাট করে মাত্র বসবাসের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছিল, যা পরবর্তীকালে অভিজাত সল্টলেক এলাকা হিসেবে পরিচিত হয়। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা সেখানে ল্যাট্রিন বানানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বিপদে পড়েন। নিম্ন জলাভূমিতে ল্যাট্রিন তৈরি করা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অত্যন্ত কঠিন। কারণ মাটি খুঁড়লেই সেখানে জমে ওঠে পানি। ফলে একেকটি শিবিরে দুই থেকে তিন লাখ করে শরণার্থী পায়খানা করার জন্য বেছে নেয় জলাধারের কাছাকাছি নিম্নাঞ্চল। এসব জলাধার ছিল একসঙ্গে স্নানাহার, মলত্যাগ, শৌচকাজ এবং খাওয়ার পানির উৎস। মে মাসের দিকে বৃষ্টি শুরু হলে বৃষ্টিতে সয়লাব হয়ে যাওয়া শরণার্থীশিবিরের পানি–কাদার সঙ্গে শরণার্থীদের মলমূত্র মিলে এক ভয়ংকর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্ম হয়।

সারণি–২

প্রবাসী সরকারে কাজ করেছেন, এ রকম অনেকেই জানিয়েছেন যে তাঁরা যখন বিদেশিদের নিয়ে কলকাতা শহর থেকে গাড়িতে করে শহরের উপকণ্ঠে শরণার্থীশিবিরের দিকে রওনা হতেন, শিবিরের তিন–চার মাইল আগে থাকতেই তাঁরা শিবিরের উৎকট গন্ধ টের পেতেন। এমন পরিস্থিতি মহামারির সূত্রপাতের জন্য মোক্ষম। মে মাসের শেষ দিকে শরণার্থীশিবিরে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে কলেরার জীবাণুর নতুন এক প্রজাতি। ব্যাপক মহামারির সূত্রপাত ঘটে। সারা পৃথিবীর পত্রপত্রিকায় এই মহামারির খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হতে শুরু করে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য ত্বরিতগতিতে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তারা স্থানীয় হাটবাজার, দোকানপাট বন্ধ করে দেয়, ক্যাম্প থেকে মূল শহরের পথে যাতায়াতে কড়াকড়ি আরোপ করে এবং নতুন শরণার্থীদের ভারতের প্রবেশমুখে কলেরার টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তখন মজুতে থাকা তাদের সব কলেরার টিকা এবং কলেরার স্যালাইন শরণার্থীশিবিরে সরবরাহ করে। একই সঙ্গে বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়াতে শুরু করে।

কলেরার টিকা এবং স্যালাইনের মজুত শেষের দিকে এলে জুন মাসের ৩ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কাছে কলেরা মহামারি মোকাবিলার জন্য জরুরি সাহায্যের আবেদন করেন।

এ আহ্বানের পরের দিনই, অর্থাৎ জুন মাসের ৪ তারিখেই ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে কোপেনহেগেন থেকে আড়াই টন চিকিৎসা সামগ্রী, ৩০ টন যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ পাঠায়। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জেনেভা সদর দপ্তর থেকে ২৫ লাখ ডোজ টিকা এবং ২ লাখ লিটার কলেরার স্যালাইন ৫ জুন সকালে এসে পৌঁছায়। প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটও বিনামূল্যে টিকা সরবরাহ করে। কানাডা, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ড কলেরা মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৩০ টন সামগ্রী প্লেনে করে পাঠায়। এ ছাড়া অক্সফাম এক লাখ কলেরার টিকা এবং বিপুল পরিমাণ কলেরা আইভি স্যালাইন জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ করে।

সে সময়কার অক্সফামের কর্মসূচির সমন্বয়ক জুলিয়ান ফ্রান্সিস স্মরণ করেন যে কলেরার ভয়াবহতা এবং সেই সঙ্গে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন কলেরার আইভি স্যালাইন এমন দুষ্প্রাপ্য হয়েছিল যে কোথাও কোথাও উপায়ান্তর না দেখে স্থানীয় চিকিৎসকেরা ডাবের পানি বোতলে পুরে আইভি স্যালাইনের মতো করে শরীরে দিয়ে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। এখানে উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে আইভি স্যালাইন এখনকার মতো প্লাস্টিক ব্যাগে পাওয়া যেত না, পাওয়া যেত কাচের ভারী বোতলে। কাচের বোতল হওয়ায় এগুলো পরিবহন করাও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া শিরাতে সুচ ফোটানোর জন্য প্রয়োজন হতো কম্পাউন্ডার বা ডাক্তারের। তাঁদের সংখ্যাও ছিল নগণ্য। সব মিলিয়ে সে সময় কলেরার মহামারিতে অসংখ্য শরণার্থীর মৃত্যু ঘটতে থাকে।

শরণার্থীদের কলেরায় মৃত্যুর হার বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালের ২১ অক্টোবরে দ্য ল্যানসেট–এ। লিখেছিলেন সেভ দ্য চিলড্রেনের বৈদেশিক ত্রাণ ও কল্যাণ বিভাগের তদানীন্তন কর্মকর্তা জন সিম্যান। তিনি ১৯৭১ সালের অক্টোবর–নভেম্বর মাসে কলকাতার সল্টলেক শরণার্থীশিবিরের প্রতি সাত পরিবার পরপর একটি পরিবারে সমীক্ষা করে এবং জুন মাস থেকে শুরু করে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শিবিরের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, সল্টলেক শিবিরে ১ লাখ ৭০ হাজার শরণার্থীর ভেতর মৃত্যু ঘটেছে ৪ হাজারের। এই মৃত্যুহার বিবেচনা করে সিম্যান বলেছিলেন, ভারতে বাংলাদেশের শরণার্থীর মৃত্যুর সংখ্যা হবে দুই লাখের মতো। কিন্তু এটি যে একটি রক্ষণশীল হিসাব, সিম্যান নিজেই তা স্বীকার করেছেন। কারণ, সল্টলেক এলাকাটি কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে হওয়ায় সেখানে দেশি–বিদেশি সাংবাদিক এবং কর্মকর্তাদের আনাগোনা ছিল সবচেয়ে বেশি। ফলে এই শিবিরে ত্রাণ এবং চিকিৎসা–সুবিধাদি ছিল অন্য শিবিরগুলোর চেয়ে ভালো। এখানে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে সমগ্র শরণার্থীদের মৃত্যুহার হিসাব বিবেচনা করা তাই সঠিক নয়।

আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে আশ্রিত শরণার্থীদের ভেতর কলেরার প্রকোপ হয়েছিল ভয়াবহ। দিনে ৭০-৮০ থেকে শুরু করে কোনো কোনো দিন ৩০০ পর্যন্ত মানুষ মারা গেছে কলেরা ও অন্যান্য পেটের অসুখে। জানা গেছে, শরণার্থীদের অধিকাংশ হিন্দু ছিল বলে একপর্যায়ে তাদের শব দাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, বনাঞ্চল উজাড়ের আশঙ্কায় মৃতদেহ সৎকারের জন্য কাঠ জোগাড় করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় মেঘালয়ে। মৃতদেহ সৎকারে খরচও তখন বেড়ে গিয়েছিল অনেক। ফলে দেখা গেছে, মৃতদেহ বালুচরে সামান্য বালু খুঁড়ে চাপা দিয়ে আসা হয়েছে, যাদের খেয়েছে শিয়াল–কুকুর। অনেকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে লাশ, যা হয়েছে শকুনের খাদ্য।

বাংলাদেশি শরণার্থীদের কলেরায় মৃত্যু নিয়ে আরেকটি নিবন্ধ লেখেন ডক্টর দিলীপ মহলানবিশ জনস হপকিনস মেডিকেল জার্নাল–এ ১৯৭৩ সালে। সেখানে তিনি কলেরা এবং কলেরাসদৃশ রোগের মৃত্যুহার ৩০ শতাংশ বলে উল্লেখ করেন।

জন সিম্যান এবং দিলীপ মহলানবিশের নিবন্ধের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মৃত্যুহারসংক্রান্ত গবেষক ড. শামস এল আরেফিনের সঙ্গে পরামর্শ করে সম্প্রতি আমরা শরণার্থীদের মৃত্যুর বাস্তবসম্মত সংখ্যা নির্ণয় করার চেষ্টা করি। জন সিম্যানের সমীক্ষার পাশাপাশি শরণার্থীশিবিরে কোন বয়স-দলের কত শতাংশ মানুষ ছিল, তার একটি সারণি তৈরি করেছিলেন সে সময়কার তরুণ আমেরিকান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জন রোডি। জন রোডি বিভিন্ন বয়সীদের মধ্যে কত শতাংশ কলেরা বা কলেরাসদৃশ ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, তার একটি নমুনা চয়ন করেছিলেন। বয়স বিভাজনের শতাংশ নিরূপণে দুজন গবেষকের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। আমরা উভয়ের সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য কতজন ভর্তি বা আক্রান্ত হয়েছিল, প্রতি হাজারে কত মৃত্যু হয়েছিল, তার একটা হিসাব করেছি। এরপর জুন–জুলাইয়ে সম্ভাব্য শরণার্থী সংখ্যাকে হিসাবের ভিত্তি ধরে সেই সময়ে কলেরায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার আরোপ করে শরণার্থীদের মোট মৃত্যুর যে সংখ্যাটি আমরা পেয়েছি, তা আমরা সারণি–২–এ বিশদভাবে উল্লেখ করেছি।

১. সল্টলেকে ৩৯ শতাংশ শিশুমৃত্যু ডায়রিয়া ও ডিসেন্ট্রিজনিত; ২. সল্টলেকে শিবিরের চিকিৎসার মান বনগাঁতুল্য হওয়ায় মৃত্যুহার ছিল ৪ শতাংশের নিচে; ৩. দিলীপ মহলানবিশের সমীক্ষা অনুযায়ী কলেরাসদৃশ রোগে মৃত্যুহার অন্যান্য শিবিরে বনগাঁর চেয়ে ৫ থেকে ৭.৫ গুণ (৩.৬ শতাংশের স্থলে ৩০ শতাংশ) হলেও আমাদের রক্ষণশীল প্রাক্কলনে মাত্র দুই গুণ হিসাব করা; ৪. সল্টলেক, বনগাঁ, ত্রিপুরার শিবিরে উন্নত মানের চিকিৎসা হওয়ায় তাদের অভিযোজনের বাইরে রাখা হয়েছে।

আমরা দেখতে পাই, তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশি শরণার্থী জুন-জুলাই মাসের কলেরার মহামারিসহ অন্যান্য রোগব্যাধিতে মৃত্যুবরণ করেছে। এই সংখ্যার মধ্যে এপ্রিল-মে মাসে শরণার্থীদের পথযাত্রায় এবং ক্লান্তি ও পুষ্টি এবং অন্যান্য ব্যাধিতে মৃত্যুসংখ্যা হিসাব করা হয়নি। সব সংখ্যা হিসাব করা হলে শরণার্থীশিবিরে মোট মৃত্যুর সংখ্যা আরও কয়েক লাখ বেশি হতে পারে বলে আমরা অনুমান করি। তৎকালীন ভারত সরকার এবং আন্তর্জাতিক নানা দেশ এবং সংস্থার সর্বাত্মক সহায়তা সত্ত্বেও একাত্তরের যুদ্ধের পরিণতিতে দেশ ত্যাগ করা কোটি মানুষের জীবনে যে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে এই অগণিত মৃত্যু রোধ করা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।

মুক্তিযুদ্ধে নিহতের হিসাবে এই বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর মৃত্যুর কথা অনালোচিতই রয়ে যায়। আমরা এই নিবন্ধের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগের আলোচনায় অগণ্য শহীদের সঙ্গে এই ৩ লক্ষাধিক শরণার্থীর মৃত্যুকে স্মরণ করার এবং এ নিয়ে আরও গবেষণার আহ্বান জানাই।

শাহাদুজ্জামান: কথাসাহিত্যিক ও জনস্বাস্থ্যবিদ

খায়রুল ইসলাম: ওয়াটার এইডের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক

তথ্যসূত্র

1. Bangla Desh Documents, Vol. II, (Delhi : Ministry of External Affairs, India, 1972) P. 690

2. মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চিকিৎসা সহায়তা; ড. চৌধুরী শহীদ কাদের, সময় প্রকাশন, ২০১৯

3. A story of anguish and action; UNHCR Report as focal point for the humanitarian assistance to East bengali refugees in India by and through the United Nations system; UNHCR, 1972.

4. Relief work in a refugee camp for Bangladesh regugees in India; John A Seaman, Overseas Relief and Welfare Department, Save the Children, London S. W. 1. The Lancet, October 21, 1972, pp 866-870.

5. Oral fluid therapy of cholera among Bangladesh refugees; D Mahalanabis, A B Choudhuri, N. G. Bagchi, A. K. Bhattacharya and T. W. Simpson, The Johns Hopkins University, center for Medical Research and Training, Calcutta, India; The Johns Hopkins Medical Journal, Volume 132 pp 197-205