ঢাকার যে আটটি আসনে ভোট গ্রহণ করা হয়, সেই আটটি আসনের ১৯টি কেন্দ্র সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় ভোট পড়ার হিসাব নিয়েছেন। এতে দেখা গেছে, ১৯ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এই সময়কালে ভোটারদের গমনাগমনসহ ভোটকেন্দ্রগুলোর সার্বিক পরিস্থিতিও দেখেন। তাঁদের সেই হিসাব ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই সময়রেখাভিত্তিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
অলস সকাল
(৮.০০টা থেকে ১০.০০টা)
ঢাকা-১৭ আসনের বনানী বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলে সাতটি ভোটকেন্দ্রে ২৮টি বুথ ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত সকাল আটটায়ই। কিন্তু সকাল নয়টা পর্যন্ত একটি কেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি। প্রায় একই চিত্র দেখা যায় ঢাকা-৭ আসনের আলিয়া মাদ্রাসার একটি কেন্দ্রে।
তবে ঢাকা-৬ আসনের পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজের তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে একটিতে (৫৫ নম্বর কেন্দ্র) সাড়ে আটটার আগেই একজন মধ্যবয়স্ক ভোটার আসেন ভোট দিতে। অন্যদিকে শ্যামপুরের দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ঢাকা-৫ আসনের দুটি নির্বাচনী কেন্দ্রে সাড়ে নয়টার মধ্যেই ৫৫ জন ভোটার ভোট দেন।
ভোট শুরুর প্রথম ঘণ্টায় বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটারের কোনো উপস্থিতিই ছিল না। সকাল নয়টার পর থেকে বিভিন্ন প্রার্থীর তৎপরতায় তাঁদের কর্মীরা ভোটার হাজির করতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। দক্ষিণখানের কাওলায় সিভিল এভিয়েশন উচ্চবিদ্যালয়ে স্থাপিত তিনটি কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন সাহারা খাতুন। ভোটার নেই দেখে দলীয় কর্মীদের ফোন দেন।
ধীরলয়ে ভোট
(১০.০০টা থেকে ১২.০০টা)
‘লাঙ্গল’ প্রতীক নিয়ে মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ কবি নজরুল কলেজ কেন্দ্রে সোয়া ১০টার দিকে আসেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বেলা বাড়লে ভোটারও বাড়বে। আর দিন শেষে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পড়বে। আধা ঘণ্টার মধ্যেই ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মী জড়ো হন ভোটকেন্দ্র।
এই সময়টায় বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট পড়ার গতি কিছুটা বাড়তে থাকে। তবে বুথের তুলনায় ভোটারের সংখ্যা কম হওয়ায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছিল না কাউকে। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টরা বেশির ভাগ কেন্দ্রেই গল্পগুজব করে সময় কাটাচ্ছিলেন।
মধ্য দুপুরে মৃদু উত্তেজনা
(১২.০০টা থেকে ২.০০টা)
মধ্য দুপুর শুরু হওয়ার পরপরই ভোটারদের আগমন কমে যায়। ১২টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ভোট দেননি কেউই। তবে বেলা দেড়টার পর থেকে আবার ভোটারদের আসতে দেখা যায়। এই সময় কোনো কোনো কেন্দ্রে কিছু গোলযোগ ও উত্তেজনাও দেখা দেয়। বেলা দেড়টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে বিএনএফের সমর্থক হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দোতলায় পুরুষ ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত ভোট দিতে গিয়ে হইচই শুরু করেন। উত্তেজনা বেড়ে গেলে বনানী থানা থেকে পুলিশ আনা হয়। বুথের নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কবি নজরুল কলেজের বাইরে ঢাকা মহানগর কলেজের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এ ছাড়া তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সূত্রাপুর পুলিশ। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। আলিয়া মাদ্রাসার ভোটকেন্দ্রের সামনেও দুটো ককটেল বিস্ফোরিত হয়। আর প্রার্থীদের কর্মীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।
শেষবেলায় জাল ভোট
(২.০০টা থেকে ৪.০০টা)
এই সময়ে কোনো কোনো কেন্দ্রে অল্প কিছু প্রকৃত ভোটারও আসেন ভোট দিতে।
তবে ভোট গ্রহণের শেষ সময় যত ঘনিয়ে আসতে থাকে, সরকারদলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তত তৎপর হয়ে উঠতে থাকেন। বনানী বিদ্যানিকেতনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জাল ভোট দেওয়ার জন্য একটি বুথে কর্তব্যরত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ওপর চাপ তৈরি করেন। এর মধ্যেই অনেকে একাধিক ব্যালট পেপার পূরণ করে ব্যালট বাক্সে ফেলেও দেন।
ঢাকা-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাইদুর রহমান নির্বাচন বয়কট করার ঘোষণা দিলে কবি নজরুল কলেজ কেন্দ্রে থাকা এই প্রার্থীর এজেন্টরা চলে যান। বাইরে কঠোর নিরাপত্তা থাকলেও ভেতরে ছাত্রলীগের কর্মীরা জাল ভোট দিতে থাকেন। দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্রেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী বারবার ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে গিয়ে একজন, দুজনকে সঙ্গে নিয়ে ফেরেন।
পর্যবেক্ষণ করা কেন্দ্রসমূহ
কেন্দ্রের নাম কেন্দ্র নম্বর ভোটার সংখ্যা
হাবু হাজি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামপুর ১৪ ৪০৯১
জুরাইন আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন, পূর্ব জুরাইন ৩২ ৩৯৬১
দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, শ্যামপুর ৭০ ২৬২৭
দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, শ্যামপুর ৭১ ১৮৭১
কবি নজরুল সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীবাজার ৫৫ ১৫৪৬
মাদ্রাসা ই আলিয়া, বকশীবাজার ৪৩ ৩৬১১
হাজী আশ্রাফ আলী হাইস্কুল, শেওড়াপাড়া ৭৪ ১৬৬৯
ইসলামিয়া হাইস্কুল, রূপনগর, মিরপুর দুটি ৪৬৬৯
বনানী বিদ্যানিকেতন হাইস্কুল, বনানী সাতটি ১৫৮৩৩
সিভিল এভিয়েশন উচ্চবিদ্যালয়, কাওলা তিনটি ৭৮৫১
মোট ১৯টি কেন্দ্র
ভোট পড়েছে ১২ হাজার ১৯৬টি (২৫.৫৫%)
মোট ভোটার ৪৭ হাজার ৭২৯ জন