২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

১৩৫ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদের তথ্যে গরমিল

পরিপত্র অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যাঁরা নিয়োগ পাবেন, তাঁদের তথ্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যাচাই করে নিয়োগ চূড়ান্ত করবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট চাকরিপ্রার্থীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই করে দেখার নির্দেশনা রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু সনদ যাচাই না করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

নিয়োগ পাওয়া এসব ব্যক্তির সনদ পরে যাচাই করে ১৩৫ জনের বেশ কিছু তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে। ফলে তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রত্যয়ন করেনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি। তথ্যে গরমিল পাওয়া এই ব্যক্তিদের বেশির ভাগই অফিস সহায়ক। প্রত্যয়ন পেতে ব্যর্থ হলেও অনেকের চাকরি ইতিমধ্যে স্থায়ী হয়েছে; পেয়েছেন পদোন্নতিও।

মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই করে তা প্রত্যয়নের জন্য নিজ নিজ মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ২০১৭ সালের ২১ জুন চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে ১৯ জুলাই পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর নির্দিষ্ট ছকে তথ্য চেয়ে ২২ নভেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় তার অধীন সংস্থাগুলোকে চিঠি দেয়। ১২ ডিসেম্বর এক দপ্তর আদেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে তথ্য আহ্বান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। জমা দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই-বাছাই করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ-বিষয়ক কমিটি।

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওই কমিটির কয়েক ধাপের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তথ্য না থাকা, মুক্তিযোদ্ধার নাম, জন্মতারিখে ভুলসহ তথ্যের নানা গরমিল পাওয়ায় পাউবোর ১৩৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সনদ প্রত্যয়ন করেনি কমিটি। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন কর্মকর্তা।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য মো. সফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঠানো তালিকায় থাকা কারও তথ্যের অমিল পেলে আমরা প্রত্যয়ন না করে মন্তব্য দিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছি।’

নিয়োগের আগেই মুক্তিযোদ্ধা সনদের সত্যতা যাচাই করার নিয়ম থাকলেও এত দিন পর কেন তা করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সফিকুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে পাউবোর মহাপরিচালক বা সংশ্লিষ্ট দপ্তর ভালো বলতে পারবে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যাঁরা নিয়োগ পাবেন, তাঁদের তথ্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যাচাই করে নিয়োগ চূড়ান্ত করবে। সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা, গেজেট, বাহিনী গেজেট, শহীদ গেজেট, খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত ক্যাটাগরিতে তথ্য থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাময়িক সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। উপযুক্ত গেজেটের কোনো একটিতে ও মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মুক্তিযোদ্ধার নাম না থাকলে কোটার সুবিধা পাবেন না।

২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে পাউবোতে পাঠানো তালিকায় দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে কোনো তথ্য না পাওয়ায় তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) শিবেন্দু খাস্তগীরের মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রত্যয়ন করা হয়নি। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু আমি কোটায় চাকরি নিইনি। আমি মেধা অনুযায়ী নিয়োগ পেয়েছি।’ তবে কেন মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রত্যয়ন না হওয়ার তালিকায় আপনার নাম এসেছে, জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

চাঁদপুরের মেঘনা ধনাগোদা পওর (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদারের বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদের কোনো তথ্য না পাওয়ায় তাঁর সনদ প্রত্যয়ন করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে কমিটির ভুল। আমার বাবা ইপিআই সদস্য ছিলেন। এখন সব তথ্যই ওয়েবসাইটে আছে।’

পাউবোর ঢাকা পরিচালন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ শামিম আহমেদ নিয়োগ পাওয়ার সময় তাঁর বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ জমা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ওই সনদের সত্যতার পক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য ছিল না। পরে গত বছরের ৩০ নভেম্বর সনদটি প্রত্যয়ন করা হয়েছে।

প্রয়োজনীয় তথ্য না পাওয়ায় গঙ্গা ব্যারাজ সমীক্ষা প্রকল্পের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ এইচ এম সাহিদুর রহমানের ও চট্টগ্রাম ড্রেজার বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফয়জুল ইসলামের জমা দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রত্যয়ন করা হয়নি। পরে গত বছরের ৩০ নভেম্বর তাঁদের সনদ সঠিক বিবেচনায় প্রত্যয়ন করা হয়। তবে ফয়জুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নামের আগে মোহাম্মদ নিয়ে জটিলতা হয়েছিল। এই জটিলতা ঠিক করতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছি।’

নড়াইল পওর বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার রায় বলেন, ‘গেজেটে ও সাময়িক সনদে আমার দাদার নামের বানানে ‘‘জ’’ এবং ‘‘য’’-এর পার্থক্য থাকার কারণে কমিটি প্রত্যয়ন করেনি।’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে নামের বিষয়ে প্রত্যয়নপত্র পাউবোর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেবেন বলে জানান এই প্রকৌশলী।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পাউবোর মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বর্তমানে পাউবোর প্রশিক্ষণ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী) মো. ওয়াহিদ হোসেন দাবি করেন, ‘নিয়োগের আগে মুক্তিযোদ্ধা সনদের সত্যতা যাচাই করা হলেও এখন নিয়োগের পরে করা হয়।’ তখন মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই করা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের কথা উল্লেখ করা হলে তিনি এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয়ের কমিটির যাচাই করা অনেকের নামের বানানে ভুল আছে; কারও আবার আকার-ইকারেও ভুল আছে। এসব দাপ্তরিক ভুলসহ যাঁদের তথ্যে গরমিল রয়েছে, তাঁদের তথ্য ঠিক করার সময় দেওয়া হবে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিক করতে না পারেন, তাহলে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।