১২ ও ১৩ এপ্রিল তাহলে কী হবে
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় বর্তমানে সাত দিনের শিথিল ‘লকডাউন’ চলছে, যা কাল রোববার শেষ হবে। আবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর’ লকডাউন হতে যাচ্ছে।
এ রকম অবস্থায় অনেকেরই প্রশ্ন, মাঝের দুদিন অর্থাৎ ১২ ও ১৩ এপ্রিল তাহলে কী হবে? এই দুদিন কি সারা দেশে গণপরিবহন চলবে? কোনো ক্ষেত্রেই কি বিধিনিষেধ থাকবে না? তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করছেন, যদি এই দুদিন স্বাভাবিক থাকে, তাহলে ‘কঠোর’ লকডাউনের আগে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে গ্রামের দিকে ছুটবে। তখন করোনার সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ জন্য তাঁরা চাচ্ছেন, দ্রুতই এই-দুই দিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া দরকার।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ১২ ও ১৩ এপ্রিল গাড়ি চলাচল বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার যেটা বলবে, সেই অনুযায়ী সব হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কাল সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ১২ ও ১৩ এপ্রিল কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আলোচনা সাপেক্ষে আগামীকালের মধ্যেই জানানো হবে। তবে সংক্রমণ যাতে আর না বাড়ে, সেই চেষ্টা চলছে।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন যেভাবে বিধিনিষেধ চলছে সে রকমভাবেই ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলার কথা বলা হতে পারে।
করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় সারা দেশে ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে ‘লকডাউন’। মুখে ‘লকডাউন’ বলা হলেও কাগজপত্রে সেটিকে চলাচল ও কাজে নিষেধাজ্ঞা বলা হয়েছে। এখন দূরপাল্লার গণপরিবহন ছাড়া প্রায় সবকিছুই চলছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন যেমন চলছে, তেমনি দোকানপাট এবং শপিংমলও সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা রাখা যাচ্ছে। শিল্পকলকারখানা এবং সরকারি-বেসরকারি অফিসও খোলা।
ঢিলেঢালা এমন ‘লকডাউনে’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বরং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে। করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে রেকর্ডসংখ্যক ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৩৪৩ জন। আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও কয়েক সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তখন করোনায় আক্রান্ত বহু লোককেই ন্যূনতম চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। এখনই হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রোগীদের।
এ রকম পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। সঙ্গে বাড়ছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা। এমতাবস্থায় সরকার জনস্বার্থে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।
কিন্তু সর্বাত্মক লকডাউন কেমন হবে, তা বলেননি ওবায়দুল কাদের।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ বলতে যে চিন্তাটি করা হয়েছে সেটা হলো, শুধু জরুরি সেবা ছাড়া আর কোনো কিছুই চলবে না। এখন যেমন কিছু কিছু বিষয়ে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে, সেটি হয়তো তখন আর করা হবে না।
কিন্তু মাঝের দুদিন (সোমবার ও মঙ্গলবার) কী হবে, সেটিই এখন সবার ভাবনার বিষয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, কাল বেলা তিনটায় এ নিয়ে ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হবে, সেখান থেকেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।
অন্যদিকে সরকার এক সপ্তাহের লকডাউনের কথা বললেও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ, অন্তত দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এ জন্য কমিটি সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় দুই সপ্তাহের পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
জানতে চাইলে এই কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা প্রথম আলোকে, যেহেতু কিছুদিন আগে দেওয়া বিধিনিষেধগুলো মানা হচ্ছে না, তাই করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর চলমান ঊর্ধ্বগতিতে কমিটি মনে করে সিটি ও পৌর এলাকায় সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া গেলে ভালো ফল আসতে পারে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আবার বিধিনিষেধ মেনে করোনার সংক্রমণ রোধ এবং জীবিকা চালিয়ে নেওয়া যাবে।
তিনি আশা করেন, সরকার এক সপ্তাহ বললেও লকডাউন আরও বাড়াবে। তবে এটি শুধু সরকারের একার বিষয় নয়, এখানে মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে, মানুষকে সচেতন হতে হবে।