হোলি আর্টিজান হামলার ৮ আসামি আদালতে, কড়া নিরাপত্তা
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আজ বুধবার সকাল থেকেই তাঁরা ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে ঢোকার সবগুলো প্রধান গেটে অবস্থান নিয়েছেন। আদালত প্রাঙ্গণে যাঁরা ঢুকছেন, তাঁদের প্রত্যেকের দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে।
আজ সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে হলি আর্টিজান মামলার আট আসামিকে ঢাকার আদালতে আনা হয়েছে। তাঁদের রাখা হয়েছে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায়। রাজধানীর কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক নিরু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, হোলি আর্টিজান মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকার আদালত এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা আদালত এলাকায় অবস্থান করছেন।
অন্যান্য দিন ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে যেমন মোটরসাইকেল রাখা থাকে, সেগুলো আজ নেই। প্রতিদিন দোকানপাট খোলা থাকলেও আজ বন্ধ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জাফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হোলি আর্টিজান মামলার রায়কে ঘিরে আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। কয়েক দিন আগে থেকেই আদালত এলাকায় তাঁরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন।
হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণা করবেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। দুপুর ১২টার দিকে এই রায় হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। গত এক বছরে রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় ১১৩ জন সাক্ষী হাজির করেছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নিহত পুলিশ সদস্যদের স্বজন, হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে আহত পুলিশ, হোলি আর্টিজান বেকারির মালিক ও কর্মী, জিম্মি হয়ে পড়া অতিথি এবং যেসব বাড়িতে আস্তানা গেড়ে নৃশংস এই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, সেসব বাড়ির মালিকেরা।
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে ভয়াবহ ওই হামলার ঘটনা স্তম্ভিত করেছিল পুরো বাংলাদেশকে। একই সঙ্গে স্পষ্ট হয়েছিল জঙ্গিবাদের বিস্তারের এক বিপজ্জনক মাত্রা।
জঙ্গিরা হত্যা করেছিলেন ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে, যাঁদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয় ও তিনজন বাংলাদেশি। হামলার আড়াই বছরের মাথায় গত বছরের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে হোলি আর্টিজানে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার বিচার।
মামলায় গ্রেপ্তার আট জঙ্গি আসামি হলেন আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে র্যাশ, রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ।
পুলিশের তদন্তে এসেছে, এই হামলায় জড়িত গোষ্ঠীর নাম নব্য জেএমবি, যারা ঘটনার পর নিজেদের আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট) বলে দাবি করেছিল।
ওই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একের পর এক অভিযান চালিয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়, ভেঙে দিয়েছে জঙ্গিদের অনেক আস্তানা। এসব অভিযানে নিহত হয়েছেন হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীসহ জড়িত গুরুত্বপূর্ণ আট জঙ্গি। হামলাকারী পাঁচজন নিহত হন ঘটনার পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে।