হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় কার কী দায়
>আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ হামলা পরিকল্পনা, হামলাকারী বাছাই, জঙ্গি প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও বোমা সরবরাহ, রেকি করা এবং সরাসরি হামলায় অংশ নেওয়া।
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত ২১ জনের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম। অপারেশন থান্ডারবোল্টে ২০১৬ সালের ২ জুলাই হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি নিহত হন এবং আটজন নিহত হন পরবর্তী সময়ে পুলিশের অভিযানে। জীবিত আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
গত বছরের ২৩ জুলাই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পুলিশ। সেখানে কার কী ভূমিকা ছিল, তা উল্লেখ করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গোলাম সারওয়ার খান যুক্তিতর্ক শেষে আট আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করেছেন। সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে আজ বিচারের রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে বিচারক মজিবর রহমানের।
অভিযোগপত্রভুক্ত আট আসামি রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ ও সমর্থনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর বাইরে এঁদের কেউ প্রশিক্ষণ, হামলাকারী বাছাই, অস্ত্র–বোমা সরবরাহ ও রেকি করার মতো কাজে যুক্ত ছিলেন। অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ ছাড়া বাকি ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আসামি রাকিবুল ইসলাম ওরেফে রিগ্যান এইচএসসি পাস। হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী জঙ্গিদের প্রশিক্ষক ছিলেন। ২০১৪ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে পড়ার সময় জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং পরের বছর ঢাকায় চলে আসেন। কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অভিযানে গুরুতর আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। এই রাকিবুল দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা ও প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তিনি হোলি আর্টিজানে হামলাকারী সরবরাহের কথা স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, তিনি নব্য জেএমবির উত্তরবঙ্গের ‘ইসাফা’ গ্রুপের প্রধান। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণের পর সক্রিয়ভাবে জেএমবিতে যুক্ত হন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানাধীন বোনারপাড়ার একটি বাসায় তামিম চৌধুরী, মেজর জাহিদ, সারোয়ার জাহান মানিক, তারেক, মারজান, শরিফুল ইসলাম খালেদসহ তিনি আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেন। ওই বৈঠকেই সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় তামিম চৌধুরী ওরফে তালহাকে।
তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ আসামি আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ। তিনি জঙ্গি হামলার অর্থ লেনদেন, হামলাকারীদের তুলে নিয়ে প্রশিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং বোমা ছোড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া, ঘটনাস্থল রেকি করা, অস্ত্র বহন করে নিয়ে আসাসহ হত্যাকাণ্ডে সহায়তা ও প্ররোচনার দায়ে অভিযুক্ত।
আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির শুরা সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে টাকা গ্রহণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক পদার্থ সংগ্রহ, তৈরি ও সরবরাহ করে হোলি আর্টিজান বেকারির হত্যাকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ। অর্থ গ্রহণ, হামলার জন্য অস্ত্র, গ্রেনেড সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা ও প্ররোচিত করার অভিযোগ মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান ওরফে সাগরের বিরুদ্ধে।
দাখিল পাস মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন জেএমবির দায়িত্বশীল নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালের মে মাসে জয়পুরহাটে বৈঠক করে আইএস ভাবাদর্শ অনুসারে কাজের সিদ্ধান্ত নেন। তামিম আহমেদ চৌধুরী ও সারোয়ার জাহানদের সঙ্গে মিলে আইএসপন্থী নব্য জেএমবি গঠনে যুক্ত ছিলেন এবং হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন শরিফুল ইসলাম খালেদ। নিজ বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া বাজার কলেজ মোড়ে হামলার পরিকল্পনা বৈঠকে হাজির ছিলেন। হামলাকারী জঙ্গিদের দলে অন্তর্ভুক্তিকরণ, প্রশিক্ষণসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আর মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানের বিরুদ্ধে বোমা তৈরির উপাদান সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ডে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ।