হাঁস-মুরগির খামারে ঘুরল ভাগ্যের চাকা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের চণ্ডীভোগ গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক। আগে অভাবের তাড়নায় কোনো রকম দিন পার করতেন। এখন তাঁর সুখের সংসার। মুরগির খামার বদলে দিয়েছে ভাগ্যের চাকা। শুধু আবদুর রাজ্জাকই নন, হাঁস-মুরগি পালন করে আরও অনেকের কপাল খুলেছে ওই গ্রামে।
সম্প্রতি একদিন বেলা ১১টার দিকে আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বর্ণনা করেন তাঁর কষ্ট আর সাফল্যের কথা। আবদুর রাজ্জাক বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিতে প্রায় ২৫ বছর ধরে মুরগির খামার গড়ে তোলেন তিনি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দীপশিখা থেকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে এ ব্যবসায় আসেন। মাত্র তিন হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৩০০ মুরগির বাচ্চা নিয়ে এ যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর খামারে রয়েছে ২ হাজার ২০০টি লেয়ার মুরগি আর ৪ হাজার সোনালি মুরগি। প্রতিদিন ডিম পান ২ হাজার ১০০টি করে। বাজারে প্রতি শ ডিম ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের বাজার অনেক সময় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে বলে জানান তিনি।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, মুরগির এই খামার তাঁর জীবন পাল্টে দিয়েছে। এ ব্যবসার আয় থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ করে বাড়ি করেন, সাত বিঘা জমি কেনেন। এ ছাড়া খামারে কাজ করা দুজন শ্রমিকের সংসারও চলে এই আয় থেকে। তিন ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ থেকে শুরু করে সবকিছুই করা হয় এই আয় থেকে। তাঁর স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, খামারটি তাঁদের বড় স্বপ্ন দেখার সাহস দিয়েছে।
পাশের বাড়ির আবু বক্কার গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। হাঁসের বাচ্চা কিনে বড় করে ডিম সংগ্রহ করেন। এরপর সেই হাঁস বিক্রি করে আবার বাচ্চা হাঁস নিয়ে আসেন। আবু বক্কার বলেন, তিনি এ ব্যবসা করছেন ২০ বছর ধরে। পাশের হ্যাচারি থেকে ২৬ টাকায় প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা কিনে আনেন। বর্তমানে তাঁর ৪০০টি হাঁসের বাচ্চা রয়েছে। চার-পাঁচ মাস পর এসব হাঁসের ডিম দেওয়ার কথা। তখন প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৩৭০টি ডিম পাওয়া যাবে। প্রতিটি ডিম হ্যাচারিতেই ১১ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করা যাবে। কয়েক দিন আগেও তিনি ২০০টি বড় হাঁস বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার টাকায়। হাঁসের ব্যবসা তাঁকে নতুন জীবন দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একসময় ভ্যানগাড়ি চালাতাম। ধানের মৌসুমে কামলা খাটতাম। কিন্তু দীপশিখায় প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁসের খামার করে এখন ভালো আছি।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দীপশিখার রায়গঞ্জ প্রকল্প এলাকার ব্যবস্থাপক এরশাদ আলী বলেন, অনেকেই এখান থেকে হাঁস ও মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৮৫ জন খামার করেছেন। তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে ৮০ জন সফল হয়েছেন বলে জানান তিনি।
দেশীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস বলেন, সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগে মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে, বিষয়টি সুখের।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জাহান বলেন, সরকারি নানা উদ্যোগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের এমন চেষ্টা প্রশংসার দাবিদার।