গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা ও চালকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের পরামর্শ
দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং এর প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এসব দুর্ঘটনার কারণে বছরে মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কগুলোতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং চালকদের দক্ষতা বাড়াতে তাঁদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়নে পরামর্শ দিয়েছে।
গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনে এআরআই আয়োজিত ‘দুর্ঘটনা হ্রাসে কৌশলগত পরিকল্পনা: যৌথ গবেষণা ও অনুধাবন’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার কারণে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষতি ও দুর্ঘটনা থেকে সৃষ্ট যানজট অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। দুর্ঘটনা হ্রাসে সরকার পদক্ষেপ নিলেও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার সমন্বয়হীনতার অভাবে এ ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না।
সেমিনারে এআরআইয়ের পক্ষ থেকে সড়কের নিরাপত্তায় দুটি উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। অধ্যাপক মোয়াজ্জেম বলেন, শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও সচেতনতার ওপর জোর দিতে হবে। গতি নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি ব্যবস্থাপনাশীর্ষক প্রকল্প পরিকল্পনায় যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণে আধুনিক স্পিড ক্যামেরা স্থাপন, মহাসড়কে নজরদারির জন্য স্থায়ী লোকবল নিয়োগ এবং দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিক উদ্ধার ও সেবাদানের জন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
চালকদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নশীর্ষক দ্বিতীয় পরিকল্পনায় পর্যাপ্ত উন্নত ড্রাইভিং স্কুল স্থাপন, ড্রাইভিং সিমুলেটর প্রযুক্তি ব্যবহার করে চালকদের আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালুসহ বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনাবিষয়ক গবেষণার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে এআরআইয়ের আধুনিকায়নের জন্য একটি কারিগরি সাহায্যবিষয়ক পরিকল্পনাও উপস্থাপন করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সড়ক দুর্ঘটনা একটি ‘উচ্চ দুশ্চিন্তার কারণ’। তিনি বলেন, ‘আমরা হিমশিম খাচ্ছি। কিন্তু আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, জাতীয়ভাবে বাংলাদেশের নানা অর্জন থাকলেও সড়কের নিরাপত্তা বিধানে দেশটি পিছিয়ে আছে। সড়কে দুর্ঘটনা হ্রাসে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের মুখ্য প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান।