স্বেচ্ছাসেবকদের স্বীকৃতি ও সম্মাননা দিতে হবে

স্বেচ্ছাসেবী দিবস উপলক্ষে ভিএসও এবং প্রথম আলোর উদ্যোগে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে অংশ নেন (বাঁ থেকে) যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান, পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশের উদ্যোক্তা বাদল সৈয়দ, ড্রিমস ফর টুমরোর প্রতিষ্ঠাতা জাবেদ পারভেজ ও ভিএসওর প্রজেক্ট ইমপ্লিমেনটেশন লিড সালাহ্উদ্দিন আহমেদ।

সামাজিকভাবে স্বেচ্ছাসেবা এখন আর আগের মতো স্বীকৃত নয়। স্বেচ্ছাসেবকদের উৎসাহ বাড়াতে প্রয়োজন স্বীকৃতি ও সম্মাননা। তাঁদের কাজের মান বাড়াতে যথাযথ প্রশিক্ষণও দিতে হবে।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবস উপলক্ষে ‘স্বেচ্ছাসেবার সাফল্য এবং এর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে। এ বৈঠকের আয়োজন করে ভলান্টারি সার্ভিস ওভারসিজ (ভিএসও) এবং প্রথম আলো।

বৈঠকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবাকে এখনো অনেক ছোট করে দেখা হয়। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ মুক্তিযুদ্ধ।’ করোনার সময়ে স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি।

স্বেচ্ছাসেবায় চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বছরে শুধু একবার নয়, সারা বছরই বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মাননা দিতে হবে। তাঁদের স্বীকৃতি দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পেশাগত জীবনের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবার কোনো সংঘর্ষ নেই। যে কেউ যেকোনো পেশায় থেকে স্বেচ্ছাসেবার কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া তাঁদের প্রশিক্ষণ দরকার। তাহলে স্বেচ্ছাসেবার মান আরও বাড়বে। আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টিও দেখতে হবে, তাঁদের গাইড করতে হবে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর তাদের নিবন্ধিত সংগঠনগুলোকে নানাভাবে সহায়তা করে থাকে উল্লেখ করে আখতারুজ্জামান বলেন, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবার নীতিমালা নিয়ে কাজ হচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে যেকোনো কঠিন সময় পার করা যায় বলে জানান ভিএসওর প্রজেক্ট ইমপ্লিমেনটেশন লিড সালাহ্উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দেশে অনেক স্বেচ্ছাসেবক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। তাঁদের অবদান সম্পর্কে সঠিকভাবে জানাও যায় না। তাঁদের কাজকে আরও বেশি মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশে ভিএসও শিক্ষা, জীবিকা ও স্বাস্থ্য নিয়ে ভিএসও কাজ করে। স্বেচ্ছাসেবার কাজকে একটা নীতিমালার মধ্যে আনার ওপর জোর দেন তিনি।

ড্রিমস ফর টুমরোর প্রতিষ্ঠাতা জাবেদ পারভেজ প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের নানা চ্যালেঞ্জের কথা জানান। তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবাকে এখনো সমাজে নেতিবাচক হিসেবে দেখা হয়। স্বেচ্ছাসেবাকে প্রতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি ও উৎসাহ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশের কাজ তুলে ধরেন এর উদ্যোক্তা বাদল সৈয়দ। তিনি জানান, পে ইট ফরওয়ার্ড থেকে মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকার বৃত্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের দেশের সেরা শিক্ষকদের কাছে পড়ার সুযোগসহ তরুণ ও বয়স্কদের জন্য তাদের কার্যক্রম রয়েছে বলে জানান।

বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মুমিত আল রশিদ বলেন, স্বেচ্ছাসেবকেরা লাভ–লোকসানের কথা চিন্তা করে এ কাজে আসেন না।

স্বেচ্ছাসেবকদের আরও প্রশিক্ষণ দরকার উল্লেখ করে বলেন, মানুষের সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন, যোগযোগ করবেন—এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দরকার।
বন্ধুসভার সভাপতি বলেন, স্বেচ্ছাসেবকদের সামাজিক নিরাপত্তা, মান–মর্যাদা, সামাজিক অবস্থান যতটা থাকা উচিত, সেটা ততটা নেই। এ কারণে স্বেচ্ছাসেবকেরা হেনস্তার শিকারও হন। তাই সম্মান ও স্বীকৃতির বিষয়টি দেখার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ৩৫ হাজার গাছ লাগানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে তাঁরা মানুষের মধ্যে গাছ ও বীজ দিয়েছেন। সবাই মিলে কাজ করলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে বলেও জানান।

রাজশাহীভিত্তিক সংগঠন এসো পড়তে শিখির উদ্যোক্তা নিশাত তাসনীম বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করার কথা তুলে ধরেন।
প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও ইভেন্ট প্রধান মুনির হাসান সঞ্চালকের বক্তব্যে বলেন, স্বেচ্ছাসেবকেরা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ান। করোনার সময়ে স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি। এ ছাড়া বলেন, স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানানোর জন্য প্রতিবছর ৫ ডিসেম্বর স্বেচ্ছাসেবী দিবস পালন করা হয়।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ভিএসও এর মো. শফিকুর রহমান, ইলিয়াস আলী, অনুপ গুণ, সিলেটভিত্তিক সংগঠন ইনোভেটরের সমন্বয়কারী ঈশিতা ঘোষ এবং ইয়ুথ অপরচুনিটিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন নূর।