স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহে ১০০ কদমের শোভাযাত্রা
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহের শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। শোভাযাত্রার নেতৃত্বে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন আহমেদ। অতিথি কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মির্জা মো. সুলায়মান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কমান্ডার সিরাজ উদ্দিন আহমেদ। শোভাযাত্রাটি মূল ভবন থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকে গিয়ে আটকে যায়। যথারীতি উল্টো ঘুরে আগের স্থানে ফিরে এসে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে অংশগ্রহণকারীরা।
লক্ষ করা গেছে, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহের শোভাযাত্রাটি হাসপাতালের চার দেয়াল থেকে বের হয়ে সড়ক স্পর্শ করেনি। হিসাব করে দেখা গেছে, শোভাযাত্রার দূরত্ব ছিল সর্বোচ্চ ১০০ কদম। এতে স্বাস্থ্যসেবা সচেতনতা বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব বহন করা শোভাযাত্রাটি সাধারণ মানুষের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায়।
উন্নয়নকর্মী বাহালুল আজাদ স্বাস্থ্যসেবাপ্রত্যাশী। আসেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রাম থেকে। চোখের সামনে দিয়ে লোক দেখানো
শোভাযাত্রা দেখে বিস্মিত হন তিনি। বাহালুল আজাদ বলেন, ব্যানার ধরলেন। নিজেদের আঙিনায় কয়েক কদম হাঁটলেন। ফিরে এলেন। চলে গেলেন। এই দিয়ে আর যা–ই হোক, সরকারের স্বাস্থ্যসেবার মূল বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর কোনো সুযোগ নেই।
গতকাল থেকে সারা দেশে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ পালন শুরু হয়েছে। চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা ও হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, খাদ্যবিষয়ক সচেতনতা বাড়ানো, সেবাদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন, চিকিৎসাসেবায় চিকিৎসকদের নৈতিকতাবিষয়ক জ্ঞান বাড়ানো, অটিজম ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বিশেষায়িত চিকিৎসা নিশ্চিত করার ভাবনা থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবার বেশ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ পালনের উদ্যোগ নেয়। সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে এবার গুরুত্ব দিয়ে পালনের সূচনা করে।
হাসপাতালের প্রধান ফটক লাগোয়া বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকান। দোকানিরা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বছরে বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্মসূচি পালন করতে হয়। অনেক কর্মসূচির মধ্যে শোভাযাত্রা বের করার নির্দেশনা থাকে। কিন্তু কখনোই শোভাযাত্রাটি ফটক অতিক্রম করতে দেখা যায়নি। ব্যানারটি ধরা হয় শুধু স্থানীয় সাংবাদিকদের ছবি তোলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কমান্ডার সিরাজ উদ্দিন আহমেদের মন্তব্য হলো, শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিষয়টি সাধারণ মানুষকে জানানো হয়। হাসপাতালের ভেতরেই শোভাযাত্রা শেষ করে ফেললে তো আর কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। শুধু শুধু সরকারের টাকা খরচ হচ্ছে।
হাসপাতালের ভেতরে শোভাযাত্রা শেষ করার বিষয়ে আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কে এন এম জাহাঙ্গীরের যুক্তি হলো, বেশি দূর গেলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। সেই কারণে এই শর্টকাট পদ্ধতি।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন আহমেদ শোভাযাত্রার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কেন এমনটা হলো, এখনই খবর নেবেন তিনি।