স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা

>
.
.
২৬ ডিসেম্বর ২০১৬, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩: উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

আলোচনায় সুপারিশ

* প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতার পরিমাণ ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজারে উন্নীত করতে হবে
* আগামী বছরের মধ্যে নানা ধরনের নতুন ও উদ্ভাবনী সেবা সংযোজনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বাতায়নের সেবার মান ও পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তার করতে হবে
* সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাহায্যসহ সব স্তরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, দাতা সংস্থা ও ফার্মা কোম্পানিগুলোর একাত্মতা প্রয়োজন
* স্বাস্থ্য বাতায়নের সেবাকে স্বাস্থ্যসেবার মূলধারায় আনতে হবে
* স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩–কে স্বাস্থ্যসেবার একটি ওয়ান স্টপ ইন্টিগ্রেটেড সেবা হিসেবে পরিণত করতে হবে
* গর্ভবতী মা ও শিশুর পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি কিশোর–কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার বিষয় স্বাস্থ্য বাতায়নের কার্যক্রমে আনতে হবে

আলোচনা
কামাল আহমেদ: স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করেছে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করা প্রয়োজন। এসবই আজকের আলোচনার বিষয়। শুরুতেই এ বিষেয় উপস্থাপনা করবেন নিজাম উদ্দিন আহমেদ।

নিজাম উদ্দিন আহমেদ:
নিজাম উদ্দিন আহমেদ:

নিজাম উদ্দিন আহমেদ: স্বাস্থ্য খাতে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করেছি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী স্বাস্থ্যসেবা। স্বাস্থ্য বাতায়ন সেবাটি চালু হওয়ার মাত্র আট মাসেই ১৩ লাখের বেশি মানুষকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ নম্বরের উল্লেখযোগ্য সেবাগুলো হলো এক. ডাক্তারের পরামর্শ প্রদান, দুই. দেশের যেকোনো হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ডাক্তারদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও ফোন নম্বর প্রদান, তিন. নিকটবর্তী অ্যাম্বুলেন্সের জরুরি তথ্য ও বুকিং সুবিধা, চার. স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক যেকোনো অভিযোগ ও পরামর্শ জানানোর ব্যবস্থা, পাঁচ. যেকোনো দুর্ঘটনার তথ্য গ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো।
স্বাস্থ্য বাতায়ন সেবাটির পরিচালনায় রয়েছে সিনেসিস আইটি লিমিটেড। এর অর্থায়নে রয়েছে ইউকেএইড। স্বাস্থ্য বাতায়ন নম্বর ১৬২৬৩-এ যত কল এসেছে তার প্রায় ৮০ শতাংশ কলের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার কল প্রদানকারীকে সেবাদানের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, দাতা সংস্থা ও ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর একাত্মতা প্রয়োজন।

মোহাম্মদ নাসিম
মোহাম্মদ নাসিম

মোহাম্মদ নাসিম: স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ একটি মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কয়েক দিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের এক সভায় চীনে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব মার্গার চ্যাম বললেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আমার ডান পাশে বসতে হবে।’ বসার পর তিনি বললেন, ‘আপনাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমার অভিনন্দন পৌঁছে দেবেন। কারণ তিনি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যে বিস্ময়কর অবদান রেখেছেন, সেটা আমাদের সবার জন্য অনুকরণীয়।’ স্বাস্থ্য বাতায়নের এই সেবাটি মানুষ গ্রহণ করেছে। কারণ, মাত্র আট মাসে ১৩ লাখ মানুষ ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করেছে। প্রথম আলো কয়েকটি ভালো সংবাদ ছাপিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা এতে উৎসাহিত হয়েছেন। ভালো সংবাদ সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। আমরা জাতীয় ওষুধনীতি করেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মেডিকেল কলেজের মানের ক্ষেত্রে কোনো আপস করিনি। অনিয়মের জন্য এ বছর চারটি মেডিকেল কলেজের ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছি। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে।

জাহিদ মালেক
জাহিদ মালেক

জাহিদ মালেক: স্বাস্থ্য খাত আগের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়েছে। সত্তরের দশকে আমাদের ১ শতাংশ মানুষও টিকা নিতে পারত না। এখন এটা ৯০ শতাংশের ওপরে। ওই সময়ে ভিটামিন ‘এ’-এর কোনো কার্যক্রম ছিল না। এখন এর ব্যবহার প্রায় ১০০ শতাংশে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বার্ষিক মাথাপিছু ব্যয় মাত্র ২৭ ডলার। আমাদের পাশের দেশ শ্রীলঙ্কায় এ ব্যয় ১০০ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু ব্যয় ১২ হাজার ডলার। স্বাস্থ্য বাতায়ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি অন্যতম কাজ। প্রযুক্তি স্বাস্থ্য খাতকে অনেক এগিয়ে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিনেসিস আইটির স্বাস্থ্য বাতায়নের উদ্যোগও স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

জুনাইদ আহ্মেদ পলক
জুনাইদ আহ্মেদ পলক

জুনাইদ আহ্মেদ পলক: স্বাস্থ্য বাতায়নে মাত্র ৮ মাসে ১৩ লাখ কল এসেছে। মনে হয় সারা বিশ্বে এটা একটা মাইলফলক। এই কাজ আমাদের একটা নতুন অভিজ্ঞতা। সিনেসিস আইটি একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে।
প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনের ফেসবুক পেজের অনুসারী এক কোটি। এটা বিশ্বের পোর্টালগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই মুহূর্তে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৩ লাখ সেবা গ্রহণকারীর মধ্যে ১০ লাখ ও প্রথম আলোর এক কোটি অনুসারীর মধ্যে ৫০ লাখ অর্থাৎ ৬০ লাখ মানুষের কাছে ১৬২৬৩ নম্বরটি পৌঁছে দিতে পারি। এ রকম উদ্ভাবনীমূলক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আমাদের ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারলে ব্যাপকভাবে আমরা মানুষের উন্নতি করতে পারব।

মো. হাবিবুর রহমান খান
মো. হাবিবুর রহমান খান

মো. হাবিবুর রহমান খান: স্বাস্থ্য বাতায়নের মাধ্যমে বছরে ৩৭ কোটি টাকার ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা সংশয় যে শুধু কথা শুনে এই ব্যবস্থাপত্র কতটুকু সঠিক হচ্ছে। কোনো একটা থানা বা উপজেলা জরিপ করে দেখা যেতে পারে যে স্বাস্থ্য বাতায়নের সেবার মাধ্যমে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না। আবার ফোন কলের রোগীদের চেম্বার থেকে সেবা দেওয়ার মানসিকতা আছে কি না, সেটাও দেখা প্রয়োজন। রক্ত প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এ সেবাটি সহযোগিতা করতে পারে।

আবুল কালাম আজাদ: পরীক্ষামূলকভাবে আট মাস আগে এ সেবাটি চালু করেছি। শুরুতে ভাবিনি যে আমরা এতটা সাফল্য পাব। এ কাজে ইউকেএইড সহযোগিতা করেছে। আমরা প্রতিনিয়ত এ কাজ থেকে শিখছি। ধাপে ধাপে এ সেবার উন্নতি হচ্ছে।
প্রচারে হয়তো আমাদের এখনো ঘাটতি আছে। তারপরও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করেছি।

আবুল কালাম আজাদ
আবুল কালাম আজাদ

আজকের আলোচনায় যে পরামর্শ এসেছে, এগুলো আমাদের আরও সমৃদ্ধ করবে। স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ একটি উদ্ভাবনী স্বাস্থ্যসেবা। এর পরিধি বিস্তারের মাধ্যমে সমন্বিত ওয়ান স্টপ স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে পরিণত করতে হবে। এটা এসডিজি অর্জনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবে। আমাদের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যেকোনো তথ্যপ্রযুক্তির সেবা দিতে আগ্রহী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবাই একসঙ্গে কাজ করলে স্বাস্থ্য বাতায়নের সেবাটির মাধ্যমে আরও অনেক বেশি মানুষ উপকৃত হবে।

মো. মোস্তাফিজুর রহমান
মো. মোস্তাফিজুর রহমান

মো. মোস্তাফিজুর রহমান: স্বাস্থ্য বাতায়ন একটি অন্যতম স্বাস্থ্যসেবা। যাঁরা এ সেবার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের প্রশিক্ষণের দরকার। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ওষুধশিল্পেরও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এখন ১২৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। কমবেশি ১৫ হাজার কোটি টাকার স্থানীয় বাজার রয়েছে। দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা দেশীয় ওষুধের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। আমাদের অনেকগুলো অঙ্গসংগঠন, ড্রাগ সুপার ও অন্যান্য মাধ্যমে এ নম্বরটি মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারব।

মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন: আমাদের মানবসম্পদ ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে এ নম্বরটি প্রচারের জন্য কাজে লাগাব। এ নম্বরটির টোল ফ্রি হলে এর অপব্যবহার হতে পারে। পাঁচ মিনিটের একটা কল তিন টাকা। বাংলাদেশের মানুষ এখন পাঁচ মিনিটের সেবার জন্য তিন টাকা খরচ করতে পারে। কল গ্রহণের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন

যে হারে কল গ্রহণের সংখ্যা বাড়বে, সেই হারে যদি সুযোগ-সুবিধা না বাড়ে তাহলে স্বাস্থ্য বাতায়নে বেশি কল গ্রহণ ফলপ্রসূ হবে না। একটা নির্দিষ্ট সীমার বাইরে স্বাস্থ্য বাতায়নের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া উচিত কি না, এ বিষয়ে আমার সংশয় আছে। স্বাস্থ্য বাতায়নের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের সেবাটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

নাজিমুন নেসা
নাজিমুন নেসা

নাজিমুন নেসা: সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এটা জানানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া সব মন্ত্রণালয়ও এই ১৬২৬৩ নম্বরটি তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারে। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কীভাবে এই নম্বরটি পৌঁছানো যায়, সে ধরনের পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

জাহাঙ্গীর আলম সরকার: স্বাস্থ্য বাতায়নের নম্বরটি প্রচারের জন্য আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তার সবগুলোকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন সাবসেন্টার, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল—এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ নম্বরটি ব্যাপকভাবে প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মেম্বার থেকে শুরু করে সব নির্বাচিত প্রতিনিধি এ নম্বরটি তাঁর এলাকার মানুষকে জানাবেন। 

জাহাঙ্গীর আলম সরকার
জাহাঙ্গীর আলম সরকার

এভাবে কাজ করলে দ্রুত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।

সানিয়া তাহমিনা: আমি কমিউনিকেবল ডিজিজ নিয়ে কাজ করি। আমি যখন কমিউনিটিতে এটা সম্পর্কে বলতে যাই তখন এই নম্বরটি সবাইকে জানাতে পারি।

সানিয়া তাহমিনা
সানিয়া তাহমিনা

এভাবে যে যেখানে তাঁর কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি যদি তাঁর কমিউনিটিকে এ নম্বরটি জানান তাহলে এটির ব্যাপক প্রচার হবে বলে মনে করি। বিশেষ করে পাহাড়, চর ও দুর্গম এলাকার মানুষ বেশি অবহেলিত থাকে। তাদের কাছে স্বাস্থ্য বাতায়ন নম্বরটি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে।
শামস-এল-আরেফিন: আমাদের সামনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা আছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কী ধরনের সেবা স্বাস্থ্য বাতায়নের মাধ্যমে দেওয়া হবে, সেটা নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বাতায়নে ইতিমধ্যে যে কাজ হয়েছে তার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। যেমন কারা কল করছে, কোন অঞ্চল থেকে কল করছে।

শামস-এল-আরেফিন
শামস-এল-আরেফিন

এরা কী ধরনের সেবা নেওয়ার কথা বলছে ইত্যাদি। এসব বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে এ ক্ষেত্রে কী করতে হবে।

সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা: স্বাস্থ্য বাতায়ন সেবাকে আলাদা না রেখে স্বাস্থ্যসেবার মূলধারার সঙ্গে সংযুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করি। দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্য বাতায়ন সেবার তহবিল কীভাবে আসবে তার একটা পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। এ সেবার বৈচিত্র্যের মধ্যে নারীর প্রতি সহিংসতার, কৈশোর প্রজননস্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আমি নিজেই ফোন করেছিলাম। আমার মনে হয়েছে যাঁরা ফোন ধরেন, যাঁরা সেবা দেন, তাঁদের আরও দক্ষতা ও মান

সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা
সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা

বাড়ানোর প্রয়োজন আছে।

এস কে রায়: স্বাস্থ্য বাতায়ন সেবাটির অপার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এর কতটুকু ব্যবহার করতে পারব, সেটা নির্ভর করবে আমাদের দক্ষতার ওপর। কল সেন্টার থেকে চিকিৎসার খবর ছাড়াও যেন

এস কে রায়
এস কে রায়

রোগ প্রতিরোধের খবর, শিশুপুষ্টি ইত্যাদি বিষয়ও জানা যায়। এ জন্য স্বাস্থ্য বাতায়নের সেবার মান অবশ্যই বাড়াতে হবে। প্রথম দুই-এক বছর টোল ফ্রি থাকলে এর সঙ্গে অনেক বেশি মানুষ যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

মোহাম্মদ শরীফ
মোহাম্মদ শরীফ

মোহাম্মদ শরীফ: স্বাস্থ্য বাতায়নের প্রধান কাজ হওয়া উচিত তথ্য দেওয়া। যেমন প্রসববেদনায় ভুগছেন এমন মা যেন কী করতে হবে সেটি দ্রুত জানতে পােরন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেবা দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রায় প্রতিটি আলোচনায় অ্যাম্বুলেন্সের কথা বলি। ভারতে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ মিনিটে মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যায়। স্বাস্থ্য বাতায়নের সেবাকে আরও বেশি কার্যকর করার জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

ইকবাল আহমেদ
ইকবাল আহমেদ

ইকবাল আহমেদ: বিটিআরসির একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো কানেকটিভিটি। গত কয়েক বছরে টেলিযোগাযোগ সেবা নিয়ে আমরা মানুষের দোরগোড়ায় গিয়েছি। প্রতিটি সেবার একটা কারিগরি দিক আছে। একই সঙ্গে অসংখ্য কল কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে, সেটা ঠিকভাবে না জানলে কোনো সেবা টেকসই হতে পারে না। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কল করলে যদি কোনো তথ্য দেওয়া হয়, তাহলে সেই তথ্যের যেন ভিত্তি থাকে। যিনি ফোন করেছেন তিনি যদি তথ্য মোতাবেক সেবাটি না পান তাহলে বিরক্ত হবেন। ভবিষ্যতে আর কল করবেন না।

মো. আশাদুল ইসলাম
মো. আশাদুল ইসলাম

মো. আশাদুল ইসলাম: কেবল একটা তথ্য দিলেই হলো না। তথ্য অনুযায়ী সঠিক সেবা পাচ্ছে কি না। কী সমস্যা আছে। আরও কী করা দরকার। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য বাতায়ন সেবার একটা মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। তথ্য যেন বাস্তবসম্মত হয় এ বিষয়টি সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন এখানে অনেকে কল করছে। তারা কী কী সেবা চাচ্ছে। তাদের সঠিক তথ্য দিতে পারছি কি না। যে সেবাটির কথা বলছি, সেটা তার সাধ্যের মধ্যে আছে কি না। তার পক্ষে সেবাকেন্দ্রে পৌঁছানো সম্ভব কি না ইত্যাদি। এখানে যোগাযোগের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।

জেবা মাহমুদ
জেবা মাহমুদ

জেবা মাহমুদ: আমরা গর্ভবতী মায়েদের কী খাওয়া উচিত ও শিশুদের কী খাওয়া উচিত, এই বার্তাটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করেছি। দেশের গরিব মানুষ জানে না তাদের কী খাওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বাতায়ন গর্ভবতী মা ও শিশুর পুষ্টিকর খাবারের বিষয়টি তাদের কার্যক্রমের মধ্যে আনতে পারে। এটি একটি বড় কাজ হবে বলে আমি মনে করি।

বাইজিদ খুরশিদ রিয়াজ
বাইজিদ খুরশিদ রিয়াজ

বাইজিদ খুরশিদ রিয়াজ: ডিজিটাল বাংলাদেশের একটা প্রতীকী হলো স্বাস্থ্য বাতায়ন। রোগ নির্ণয় এটা শুধু আলোচনার মাধ্যমে হয় না। এটা পর্যায়ক্রমে হয়। যেমন রোগের ইতিহাস জানতে হয়, রোগীর সঙ্গে কথা বলতে হয়, বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হয়—এসবের সমন্বয়ে কোনো রোগ নির্ণয় সম্ভব। স্বাস্থ্য বাতায়নের মাধ্যমে এটা সম্ভব নয়। তাই স্বাস্থ্য বাতায়নের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার সীমা কত দূর হবে, সেটা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

খন্দকার শহিদুল গনি
খন্দকার শহিদুল গনি

খন্দকার শহিদুল গনি: দুদিন আগে স্বাস্থ্য বাতায়নের নম্বরের মাধ্যমে একজন আমার কাছে এসেছেন। তিনি সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় বিনা পয়সায় এমআরআই করে দিয়েছি। এই হলো স্বাস্থ্য বাতায়ন। স্বাস্থ্য বাতায়নকে টেকসই করতে হলে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা—সব পর্যায়ের হাসপাতালকে সহযোগিতা করতে হবে। হাসপাতালে যে সুযোগ-সুবিধা আছে, স্বাস্থ্য বাতায়ন সেটা জানে কি না, জানি না। সবাই মিলে চেষ্টা করলে অবশ্যই স্বাস্থ্য বাতায়ন খুব ফলপ্রসূ হবে।

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান: ১৬২৬৩ নম্বরের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, কোনো রোগীর বিষয়ে কতকগুলো প্রক্রিয়া শেষ না করে চিকিৎসা দেওয়া যায় না। আর টেলিফোনে এ প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব নয়। যেকোনো রোগীর জন্য তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর রোগ যেন না হয়, সে জন্য যথেষ্ট পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। সত্যিকার অর্থেই মানুষ ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে উপকৃত হচ্ছে কি না, সেটা যাচাই করে দেখা প্রয়োজন।

এম মোস্তফা জামান
এম মোস্তফা জামান

এম মোস্তফা জামান: বাংলাদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটাকে প্রতিরোধ করার জন্য এ ধরনের একটি হেল্প লাইনের চাহিদা আমাদের রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এটা আছে। স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে এটা প্রতিরোধের উদ্যোগ নিতে হবে। ধূমপান প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সরকার অনেক কিছু করছে। ধূমপান বিভিন্ন রোগের কারণ। ধূমপান প্রতিরোধের বিষয়ও স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে প্রচার করা যেতে পারে। এনজিও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে প্রচার অনেক দূর এগোবে বলে মনে হয়।

ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার
ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার

ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার: দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ কিশোর-কিশোরী। তাদের অনেক ধরনের পরামর্শের প্রয়োজন। সবার সঙ্গে তারা এসব পরামর্শ করতে চায় না। এদের জন্য স্বাস্থ্য বাতায়নের সেবাটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত আরও কয়েকটি হেল্প লাইন আছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। তাহলে একজন অন্যের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে পারবে। বাংলাদেশের এনজিওগুলো সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন এনজিওগুলোর বিশাল নেটওয়ার্ক আছে। তাদের কাজের মধ্যে যদি স্বাস্থ্য বাতায়নের বিষয়টি নিয়ে আসে, তাহলে এর ব্যাপক প্রচার হবে।

এস এম শফিউজ্জামান
এস এম শফিউজ্জামান

এস এম শফিউজ্জামান: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওষুধনীতির খুব প্রয়োজন ছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ওষুধনীতি হয়েছে। এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাকে নিজে ফোন করে বিভিন্ন বিষয়ের অগ্রগতি জানতে চান। ব্যাপক প্রচারের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক এখন সবাই চেনে। স্বাস্থ্য বাতায়ন প্রচারের জন্যও আমাদের সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে।

মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন
মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন

মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন: আমরা ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছি। এটা নিয়ে আমাদের বড় পরিকল্পনা আছে। দেশের সব জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স যায় না। অনেক জায়গায় স্থানীয় পরিবহন ছাড়া উপায় থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেরও প্রয়োজন হয়। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা প্রয়োজন। গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে একজন স্বাস্থ্যকর্মী দ্রুত রোগীর কাছে যেতে পারেন কি না, সেটাও ভাবা প্রয়োজন। বিদেশে এটা আছে। বিদেশের উন্নত হাসপাতালকে স্বাস্থ্য বাতায়নের সঙ্গে যুক্ত করা যায় কি না, সেটাও ভাবা যেতে পারে।

রাশেদুন নেসা
রাশেদুন নেসা

রাশেদুন নেসা: স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আইসিটি মন্ত্রীর ভয়েস কল মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে প্রচার প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এটা মানুষের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পাবে। স্বাস্থ্য বাতায়নের নম্বরটি প্রচারে পল্লিচিকিৎসকদের কাজে লাগানো যেতে পারে।

কামাল আহমেদ: স্বাস্থ্য বাতায়ন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একটা নতুন উদ্যোগ। এটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

যাঁরা অংশ নিলেন
মোহাম্মদ নাসিম: সাংসদ, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
জাহিদ মালেক: সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
জুনাইদ আহ্মেদ পলক: সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভগা,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
আবুল কালাম আজাদ: মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
মো. হাবিবুর রহমান খান: অতিরিক্ত সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
ইকবাল আহমেদ: মহাপরিচালক, বিটিআরসি
মো. মোস্তাফিজুর রহমান: মহাপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন: মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
মো. আশাদুল ইসলাম: মহাপরিচালক, হেলথ ইকোনমিকস ইউনিট, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন: সিনিয়র সহকারী সচিব ও ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট ই-সার্ভিস বিশেষজ্ঞ এটুআই
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান: পরিচালক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
এস কে রায়: চেয়ারপারসন, বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন
মোহাম্মদ শরীফ: পরিচালক (এমসিএইচ সার্ভিস) ও লাইন ডিরেক্টর, পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তর
জাহাঙ্গীর আলম সরকার: পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সানিয়া তাহমিনা: পরিচালক, রোগ নিয়ন্ত্রণ, লাইন ডিরেক্টর, কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল
বাইজিদ খুরশিদ রিয়াজ: পরিচালক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রাইভেট অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন
নাজিমুন নেসা: পরিচালক, এমআইএস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
এম মোস্তফা জামান: উপদেষ্টা, গবেষণা ও প্রকাশনা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
খন্দকার শহিদুল গনি: পরিচালক, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল
এস এম শফিউজ্জামান: মহাসচিব, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি
সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা: বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা, ইউএনএফপিএ
রাশেদুন নেসা: পরিচালক, পরিকল্পনা ও গবেষণা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
শামস-এল-আরেফিন: প্রধান, শিশু স্বাস্থ্য, আইসিডিডিআরবি
ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার: হেড অব হেলথ প্রোগ্রাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
জেবা মাহমুদ: কান্ট্রি ম্যানেজার, অ্যালাইভ অ্যান্ড থ্রাইভ
নিজাম উদ্দিন আহমেদ: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সিনেসিস হেলথ, সিনেসিস আইটি
সঞ্চালক
কামাল আহমেদ: পরামর্শক সম্পাদক, প্রথম আলো