স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বামীর দাপটে চলতেন কুলসুমা, পেলেন বদলির শাস্তি
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেনের স্বাস্থ্য সহকারী ও স্ত্রী কুলসুমা আকতার দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতেন। স্ত্রী কুলসুমা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে হাজিরা খাতায় তাঁর স্বাক্ষর দিয়ে দিতেন রবিউল। পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বামীর দাপটে চলতেন কুলসুমা।
কুলসুমার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি এসব অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কুলসুমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পটিয়ার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে বদলি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুলসুমার বিরুদ্ধে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার প্রমাণ মিলেছে। হাজিরা খাতায় তাঁর নিজের স্বাক্ষর ছিল না। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁকে পুনরায় মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।’
সাংসদ ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ইউনিয়ন পটিয়ার শোভনদণ্ডীতে সরকারি নির্দেশনা না মেনে আগেভাগে গণটিকা দেওয়ার প্রমাণ মেলায় রবিউলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মূলত স্বামী রবিউলের টিকাকাণ্ডের পর কুলসুমার কীর্তি বেরিয়ে আসে।
কুলসুমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে সিভিল সার্জন কার্যালয় গত ১২ আগস্ট কমিটি গঠন করে। পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট প্রবাল চক্রবর্তীকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসার পর ১ সেপ্টেম্বর সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি কুলসুমাকে বদলির আদেশ দেন।
সিভিল সার্জনের আদেশে বলা হয়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা-ইউএইচএফপি) আদেশে কুলসুমাকে রবিউলের (ইপিআই) সহযোগী হিসেবে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল। এরপর দৈনন্দিন হাজিরা খাতায় কুলসুমার দীর্ঘদিন স্বাক্ষর না করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এ ছাড়া হাজিরা তদারকিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতিও ছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য সহকারী কুলসুমাকে জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
কুলসুমা আগে চন্দনাইশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি হয়ে আসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচএফপি) সব্যসাচী নাথ প্রথম আলোকে বলেন, কুলসুমাকে ইতিমধ্যে জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে মাঠপর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পর সিভিল সার্জন এই নির্দেশ দেন।
গত ৩০ ও ৩১ জুলাই পটিয়ার শোভনদণ্ডীতে আগাম গণটিকা দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই কর্মী রবিউল। টিকার দায়িত্বে তিনিই ছিলেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে তিনি এ কাজ করেন।
পরে জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট অজয় দাশের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি অভিযোগের প্রমাণ পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ আগস্ট রবিউলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পরে রবিউলের স্ত্রী কুলসুমার বিরুদ্ধে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ নিয়ে গত ২ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘শুধু টিকা নিয়ে ঘাপলা নয়, স্ত্রীর হয়ে “হাজিরা দিতেন” পটিয়ার ওই স্বাস্থ্যকর্মী’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এদিকে শোভনদণ্ডীতে গণটিকার প্রথম ডোজপ্রাপ্ত ৩৬০ জনের নিবন্ধন কার্ড গতকাল বুধবার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। রবিউল এসব নিবন্ধন কার্ড জমা দেন। এর আগে তিনি তদন্ত কমিটির কাছে বেশ কিছু নিবন্ধন কার্ড জমা দিয়েছিলেন। সবকিছু শেষ হওয়ার পর এখন নতুন করে নিবন্ধন কার্ড জমা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটির কাছে কিছু টিকা কার্ড তখন দিতে পারেননি রবিউল। সেগুলো বুধবার তিনি জমা দিয়েছেন। তাঁদের (টিকাগ্রহণকারী) তো টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। রবিউলের শাস্তি বহাল রয়েছে।
রবিউল পটিয়া কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি পটিয়ার সাংসদ ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর একই ইউনিয়ন শোভনদণ্ডীতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী প্রথম আলোকে বলেন, রবিউল সব সময় হাসপাতালে প্রভাব খাটাতেন। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাত্তা দিতেন না। আর রবিউলের দাপটে চলতেন তাঁর স্ত্রী কুলসুমা।