স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য বাছাই যেভাবে হয়
স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। সাধারণভাবে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ১০ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা ‘স্বাধীনতা পুরস্কারসংক্রান্ত নির্দেশাবলি’ অনুযায়ী একাধিক ধাপে যাচাই-বাছাই করে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়। ১৩ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। ক্ষেত্রগুলো হলো স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিদ্যা, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, পল্লী উন্নয়ন, সমাজসেবা বা জনসেবা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, জনপ্রশাসন, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং সরকার নির্ধারিত অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে এই পুরস্কার দেওয়ার কথা। তবে পুরস্কারের সংখ্যা সাধারণভাবে কোনো বছরে ১০–এর বেশি হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা পোষণ করলে কোনো বছর এই পুরস্কারের সংখ্যা বা ক্ষেত্র কমবেশি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ১টি প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এবার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে পদক পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম), আবদুল জলিল, সিরাজ উদদীন আহমেদ, মরহুম মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস ও মরহুম সিরাজুল হক। চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া সাহিত্যে মরহুম মো. আমির হামজা এবং স্থাপত্যে মরহুম স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন এই পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এই পুরস্কার পাচ্ছে। এর মধ্যে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হওয়া মো. আমির হামজার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রামের স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে প্রার্থী নির্বাচনকালে দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসাধারণ অবদান রেখেছেন এমন সীমিতসংখ্যক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক জীবনের কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে।
স্বাধীনতা পুরস্কারসংক্রান্ত নির্দেশাবলিতে বলা আছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পরবর্তী বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব আহ্বান করে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং ইতিপূর্বে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার বা স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের কাছে পত্র পাঠায়। নির্ধারিত যেকোনো ক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করা যাবে। প্রস্তাবগুলো নভেম্বর মাসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পৌঁছানোর কথা।
এরপর প্রস্তাবগুলো ‘প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি’র মাধ্যমে যাচাই–বাছাই করা হয়। ১৬ সদস্যের ‘প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি’র চেয়ারম্যান হলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। যেখানে বিভিন্ন সচিব সদস্য হিসেবে থাকেন।
‘প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি’তে যাচাই-বাছাই করার পর প্রস্তাবগুলো ‘জাতীয় পুরস্কারসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র মাধ্যমে প্রক্রিয়া করে প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হয়।
জাতীয় পুরস্কারসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। আর সদস্যরা হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ১০ জন এই কমিটির সহায়তাকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।