স্থানীয় সরকারের প্রকল্পে ধীরগতি, সংসদীয় কমিটির অসন্তোষ

অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি আবদুস শহীদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন
ছবি: সংগৃহীত

পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। শুরুতে এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল চার বছর ছয় মাস। প্রকল্পটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়। সময় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অথচ এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ১৮ শতাংশ।

এ প্রকল্পের মতো স্থানীয় সরকার বিভাগের বেশির ভাগ প্রকল্প চলছে ধীরগতিতে। এতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটি। পাশাপাশি ধীরগতির কারণ অনুসন্ধান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। আজকের বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি বেশ কিছুদিন আগেই প্রকল্পগুলোর তথ্য চেয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় এসব তথ্য কমিটিকে সরবরাহ করেছে বৈঠকের আগের রাতে। তথ্য দিতে দেরি করায় কমিটি বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করে। তারা বলেছে, বেশির ভাগ প্রকল্প বারবার সংশোধন করা হচ্ছে। শুরুতে কেন সবকিছু যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা হয় না। সময় ও ব্যয়বৃদ্ধির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকদের দায়িত্ব নিতে হবে, প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ সময় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, স্থানীয় সরকারের প্রকল্পগুলো বেশির ভাগ তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জনগণের প্রতি জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন অঙ্গীকার থাকে। জাতীয় নির্বাচনের বাকি আছে দেড় থেকে দুই বছর। অনেক প্রকল্প চলছে ধীরগতিতে। ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ যেসব প্রকল্প শেষ পর্যায়ে আছে, সেগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেষ করার তাগিদ দেয় কমিটি।

বৈঠকে সাংসদদের জন্য ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দের বিষয়েও আলোচনা হয়। এ অর্থ অনেকে পাচ্ছেন না, এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, কোনো কোনো সাংসদের অনুকূলে কিছু টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু অনেক সাংসদ প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিচ্ছেন না। এ সময় একজন সাংসদ বলেন, তিনি ২০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিলেও এখনো বরাদ্দ পাননি। পরে কমিটি এ বরাদ্দের বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করে।

অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি আবদুস শহীদ বৈঠক শেষে প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ ১৮৫টি প্রকল্পের তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্যের পর্যায়ে। কোনো কোনো প্রকল্পে দেখা গেছে, আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি প্রায় সমান। অর্থাৎ যতটুকু টাকা খরচ করা হয়েছে, বাস্তবে কাজও ততটুকুই হয়েছে—এটা হওয়ার কথা নয়। আর্থিক অগ্রগতির চেয়ে বাস্তব অগ্রগতি বেশি হওয়ার কথা। এটি সমান হওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক প্রকল্প আছে সাংসদেরা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন, কিন্তু কাজ এগুচ্ছে না। এ কাজগুলো শেষ করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে কমিটি। এ ছাড়া কোন প্রকল্প কতবার সংশোধন করা হয়েছে, তা জানাতে বলা হয়েছে।

বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকল্পে ধীরগতিতে কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রকল্পগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো প্রথম পর্যায়ে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো দ্বিতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে কমিটি।

কমিটির সভাপতি আবদুস শহীদের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, এ বি তাজুল ইসলাম, আহসান আদেলুর রহমান, ওয়াসিকা আয়শা খান ও খাদিজাতুল আনোয়ার বৈঠকে অংশ নেন।